দেশে ১২০৫টি নিবন্ধনহীন হাসপাতাল!

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ


এবার কি ব্যবস্থা নেয়া হবে?

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন সারা দেশে অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মন্ত্রীর নির্দেশের পর ১৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দেশের সব বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনের কাছে চিঠি দেন। চিঠিতে নিজ নিজ এলাকার নিবন্ধনহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংকের তালিকা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছিল। ১৫ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে অভিযান চালিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিবন্ধনহীন হাসপাতালের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। এই তালিকা অনুয়ায়ী সারা দেশে ১ হাজার ২০৫টি নিবন্ধনহীন হাসপাতালের সন্ধান পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব নিবন্ধনহীন হাসপাতালর মধ্যে ৭৩১টির কার্যক্রম ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে।

রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনার পর জানা যায়, চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনায় ওই হাসপাতালের নিবন্ধন ছিল না। এমনকি তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এ-সংক্রান্ত কোনো আবেদন না করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারপরই নিবন্ধনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনার পরই কেন নিবন্ধনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা তৈরি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে? অর্থাৎ আয়ানের মত আরো কাউকে বিনা চিকিৎসায় কিংবা ভুল চিকিৎসার জীবন দেয়ার পরই
কেবল অবৈধ-হাসপাতাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা মনে করতে হবে? অবহেলায় কিংবা ভুল চিকিৎসায় অঙ্গহানি কিংবা মৃত্যুর পরও যে অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয় তাও দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়। ঘটনা সংঘটিত হলে হইচই হয় বটে তাতে পরিস্থিতি মোটেও পাল্টায় না, যেমনকার তেমনি থাকে। নিবন্ধনহীন হাসপাতাল এই প্রবণতা এটাই প্রমাণ করে যে, অন্যায়, অপরাধ করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়। ফলে অবৈধ কাজ উৎসাহিত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। দেশের টিকিৎসা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য চলতেই আছে।

যদি নৈরাজ্য না-ই থাকবে তা হলে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারতো। আর সেটা হলে অবৈধ কিংবা নিবন্ধনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানই শুধু নয়Ñ চিকিৎসা নৈরাজ্যের ক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় হলো- নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের শর্তানুযায়ী চলছে কি না সেটাও নিয়মিত মনিটরিং হয় না। অর্থাৎ বৈধতার মধ্যেও অবৈধ কাজ চালানোর সুযোগ আছে। যে গুলো অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে হয়Ñএমন খবর সংবাদ মাধ্যমে আসে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সামগ্রিক ভাবেই ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার। বিচ্ছিন্নভাবে পরিস্থিতি বিবেচনা করলে একই অবস্থানেই আটকে থাকবে। দুঃখজনক ঘটনা ঘটবে, দেশজুড়ে তোলপাড় হবে- নানা মত ও সিদ্ধান্তের কথা বলা হবেÑ তাতে মনে হতে পারে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় দেখা যাবে পরিস্থিতিটি একই জায়গায় আছে। প্রকৃতঅর্থে এটার পরির্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়।