দেশে ৩৪ লাখ পথশিশু!

আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

বৈষম্যের দেয়ালটা ভাঙ্গতেই হবে

১৮ মার্চ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে পথশিশুদের পরিস্থিতি-২০২৪’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য উদ্বেগজনক। সারাদেশে ৩৪ লাখেরও বেশি পথশিশু বাবা-মায়ের যত্ন ছাড়াই জীবনযাপন করছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। পথশিশুদের সংখ্যা যে ক্রমশই বাড়ছে এই তথ্য সেটাই প্রমাণ করে।

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চরম দারিদ্র্য, পারিবারিক অস্থিরতা এবং শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের পটভূমি থেকে বেড়ে ওঠা শুরু হয় পথশিশুদের। অর্থনৈতিক চাপ প্রায়ই এসব শিশুকে শ্রমে বাধ্য করে, তাদের শিক্ষার সুযোগ কমিয়ে দেয় এবং দারিদ্র্যের একটি চক্রকে স্থায়ী করে। পিতামাতার অবহেলা, অপব্যবহার এবং পরিত্যাগসহ পারিবারিক কর্মহীনতা সরাসরি তাদের রাস্তায় বেরিয়ে আসতে প্রভাবিত করে।

পথশিশুরা মাদকদ্রব্য বিক্রি, পকেট মারা, চুরি, ছিনতাই, যৌনকর্মসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় কিংবা তাদেরকে যুক্ত করা হয়। অনেক শিশু আছে, যাদের অভিভাবকরাই তাদের চুরি, যৌনকর্মসহ নানা অসৎ কাজে আসতে বাধ্য করে। অর্থাৎ সামাজিক অপরাধ-উৎস হিসেবেও পথশিশুরা বিবেচিত হচ্ছে। পরিবার তো বটেই মূল স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন এই শিশুরা নানা অবহেলা ও বঞ্চনা নিয়ে বড় হয়।

স্বাভাবিকভাবেই এই শিশুরা বিচ্ছিন্নতাবোধে হীনমন ও ক্ষুব্ধ হয়ে থাকে। তারা সমাজকে নিজের মনে করবে না এটাই স্বাভাবিক। আর এই বিচ্ছিন্নতাবোধ সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য ভয়ঙ্কর প্রতিবন্ধকতাও বটে। সামাজিক বিভেদ, বৈষম্য ও বঞ্চনার মধ্যে বেড়ে ওঠা এই শিশুদের দায় সমাজ অস্বীকার করতে পারে না। রাষ্ট্রকে এ দায় নিতে হবে।

প্রতিটি শিশুর সুরক্ষা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। শিশু যদি সম্ভাবনাময়, রাষ্ট্রের সম্পদ হয়Ñ তা হলে অবশ্যই এসব শিশুকে মানবসম্পদে উত্তরণ ঘটানোর বিকল্প অন্য কিছু নেই।

মায়ের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে শিশুর জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ হবে-এটাই স্বাভাবিক। পরিবারে নারীদের বিড়ম্বিত ও অপমানের জীবনও পরিস্থিতির জন্য অনেক বেশি দায়ি। এই পরিস্থিতি আমাদের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক দুর্বলতার চিত্রই স্পষ্ট করে তোলে। পরিবারকে পরিবার হয়ে ওঠার জন্য সামাজিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার বৃহত্তরপটে কোনো উদ্যোগ নেই।

ভাষা ও সংস্কৃতির উৎস ধরেই এ দেশের মানুষের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে। ফলশ্রুতিতে একটি জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই স্বাধীনতার মৌল চেতনাই ছিল একটি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের। যার মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন সম্প্রীতির সমাজ গড়ে উঠবে।

আর এই সম্প্রীতিটাই গড়ে ওঠে মানুষের সাংস্কৃতিক চেতনাবোধের জাগরণ থেকে। এ ক্ষেত্রে দেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এখানেই কাজ করার যে ঘাটতি আছে তার নিরসন হওয়া বাঞ্ছনীয়। মা নিরাপদ থাকলে সন্তান নিরাপদ থাকবে, দেশের অর্থনীতি নিরাপদ হবে। বৈষম্যের কঠিন দেয়ালটা ভাঙ্গতেই হবে, বর্তমান ও ভবিষ্যত শিশুদের সুরক্ষার জন্য।