ফাইভজি প্রকল্পের ২৬ এর পরিবর্তে ১২৬ টেরাবাইট কেন?

আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

যথাযথ মূল্যায়ন ও পদক্ষেপ কাম্য

ডিজিটাল থেকে দেশ এখন স্মার্টের অভিযাত্রায়। আর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি। যার উৎকর্ষতার উপর নির্ভরশীল স্মার্ট বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত অবকাঠামো আপডেট করার কাজ চলছে। কিন্তু সেখানেও দুর্নীতির কালো ছায়া। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গেছে, ফাইভজি প্রকল্পের আওতায় ২৬ এর পরিবর্তে ১২৬ টেরাবাইট ধারণ ক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনাকাটার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দলের অভিমত ওই প্রকল্পের ২০৩০ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৬ টেরাবাইট সক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনা যেতে পারে। যেখানে সর্বোচ্চ ১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে কাজ করা সম্ভব। অথচ ২৬ এর পরিবর্তে ১২৬ টেরাবাইট ধারণ ক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনাকাটার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কেনার চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এই বাড়তি যন্ত্রাংশ কোনোদিন ব্যবহারই হবে না। তাই যন্ত্রাংশের নামে খোলস সরবরাহ করে অন্তত ১৬১ কোটি টাকা লোপাটের ছক চুড়ান্ত করেছে চীনা কোম্পানির সঙ্গে দেশীয় চক্র। তবে চলমান ডলার সংকটের কারণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলসি খুলতে না পারায় চক্রটি টাকাগুলো এখনো ভাগবাঁটোয়ারা করে পকেটে তুলতে পারে নি। সুতরাং পদক্ষেপ এখনই কাম্য।

বিটিসিএল এর অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘ফাইভজির উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের বিপরীতে ৪৬৩ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। চীনের তিনটি প্রতিষ্ঠান এই দরপত্রে অংশ নিয়েছিলো। দরপত্র মূল্যায়ন ও চীনের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদানে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ পায় দুদক। কমিশন অভিযোগ আমলে নিয়ে দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিমও গঠন করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, নথিপত্রে ওই তিন প্রতিষ্ঠানের কেউ-ই দরপত্রের শর্ত পূরণ করতে পারে নি! কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিষয়টির উল্লেখ থাকার পরও সবাইকেই যোগ্য হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়। তবে বিটিসিএলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমন মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদন না দেওয়ায় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তাকে বদলি ও পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হলে সে আদেশ স্থগিত হয়। তবে এতকিছুর পরও কাজটি বাগিয়ে নেয় চীনের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

বৈশ্বিক ডলার সংকটের চলমান পরিস্থিতিতে শুধু লুটপাটের লক্ষ্যে প্রয়োজনের চেয়ে ১০০ টেরাবাইটের অধিক ধারণক্ষমতার অবকাঠামো নির্মাণ চেষ্টা বন্ধ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে প্রকল্পটি অবিলম্বে পুনরায় যাচাই-বাছাইপূর্বক প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় করার উদ্যোগ নেয়া দরকার।