বাজার ব্যবস্থা সিন্ডিকেশনের দৌরাত্ম্য

আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

নাগরিক উদ্যোগ বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ‚মিকা রাখতে পারে

দেশে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব যে আছে সেটা সরকার স্বীকার করছে; একই সাথে দেশের সাধারণ মানুষ সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তদুপরি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুফল খুব একটা ভোক্তাসাধারণ পায় নি। বরং সিন্ডিকেটের প্রভাব ও দৌরাত্ম্য এবং সরকারের নির্দেশনা আমলে না নেয়ার ধৃষ্টতারই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ইফতারে বহুল ব্যবহৃত ২৯টি পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু রাজশাহীর বাজারে এই নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা গৎবাঁধা কথাই বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি তাই নির্ধারিত দাম রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আর ক্রেতারা বলছেন, সরকারের নির্দেশ মানছেন না ব্যবসায়ীরা। দ্রæত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মুক্তবাজার ব্যবস্থায় ‘কঠোরারোপ’ করা মোটেও সহজ কাজ নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানামুখি পদক্ষেপ কিছুটা হলেও ভ‚মিকা রাখছে বটে, তবে সেটা মোটেও যথেষ্ট নয়। বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে নতুন নতুন উদ্ভাবনিরও প্রয়োজন আছে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা ও নাগরিক উদ্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভ‚মিকা রাখতে পারে। এমন দু’একটি উদ্যোগ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে সুফল পাওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রাজধানীজুড়ে যেখানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে, সেখানে রমজানের শুরু থেকে প্রতি কেজি গরুর মাংস মাত্র ৫৯৫ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন উত্তর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান। প্রথম রমজানেই শুরু হয় এই দামে মাংস বিক্রি। শুরুর দিনই ব্যাপক সাড়া পান এই বিক্রেতা। এখন প্রতিনিয়ত বিক্রির রেকর্ড ভাঙছে। ক্রেতাদের এতই উপচে পড়া ভিড় যে কোনো কোনো দিন কোটি টাকারও বেশি বিক্রি ছাড়ায়। অল্প দামে মাংস কিনতে পেরে ক্রেতা যেমন খুশি, তেমনি অল্প লাভে বেশি পরিমাণে মাংস বিক্রি করতে পেরে খুশি বিক্রেতাও।

খলিলুর রহমানের দেখাদেখি রাজধানীতে এখন আরো কয়েকজন কম দামে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে একজন মালিবাগের খোরশেদ এবং পুরান ঢাকার কসাইটুলি বাংলা স্কুলের সামনে নয়ন আহমেদ। তারাও কম দামে মাংস বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে- কারা যদি নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করতে পারেন তা হলে অন্যরা কেন পারবেন না? সিন্ডিকেটের মাজেজা এখানেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই সিন্ডিকেটই মাংস বিক্রেতা খলিলকে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু উল্লিখিত মাংস বিক্রেতারা প্রমাণ করেছেন, সরকার নির্ধারিত দামেই গরুর মাংস বিক্রি সম্ভব। রাজশাহী মেট্রোপলিটান পুলিশ এই উদ্যোগ ধারণাকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল এই প্রতিষ্ঠানটি সরকার নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রির উদ্যোগ নিয়ে নাগরিক উদ্যোগের দায়কে উৎসাহিত করেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি এ ধরনের উদ্যোগ বাজারকে সিন্ডিকেশনের দৌরাত্ম্যমুক্ত রাখতে পারে।