সেচ নীতিতে সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকছে না

আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে ভাবতে হবে!

নতুন জারি করা সেচ নীতিতে তুলে দেয়া হয়েছে সময়ের বাধ্যবাধকতা। এখন থেকে বৈদ্যুতিক সেচ কার্যক্রমের জন্য আলাদাভাবে কোনো সেচ মৌসুম থাকছে না নতুন নীতিমালায়। স্থানীয় এলাকার প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সারা বছরই বৈদ্যুতিক সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আবেদনকারীরা বছরব্যাপি পাবেন সেচ সংযোগ। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সোনার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত সেচ মৌসুম বিবেচনা করা হতো। এ সময়ের বাইরে আবেদন করলে পাওয়া যেতো না সেচ সংযোগ। এটিকে সাধারণত বোরো মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে দেখা যায়, সারা বছরই কোনো কোনো এলাকায় সেচের প্রয়োজন হয়। তখন সংযোগের আবেদন করলে তা পাওয়া যেতো না।

সেচ নীতিমালা ২০২৪-এ বলা হয়েছে, আউশ, আমন ও বোরো ধান উৎপাদনের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, তেল জাতীয় ফসল, হলুদ, আদা, শাক-সবজি, মৌসুমি ফুল-ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে সকল ধরনের কৃষিকাজ সেচ কার্যের আওতাভুক্ত হবে।

জাতিসংঘের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের দিক দিয়ে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। আর ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা পানির ৯০ শতাংশই ব্যবহার করা হয় সেচ কাজে। দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা পরিস্থিতি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে। এ অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্ত পানির স্তর ক্রমশই নিচের দিকে নামছে। এ অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণও খুব কম। বৃষ্টিপাতের জাতীয় গড় ২৫০০ থেকে ৩০০০ মি.মি হলেও বরেন্দ্রে বৃষ্টির গড় ১২ শো থেকে ১৩ শো মি.মি। বরেন্দ্র অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের এই গড় এ অঞ্চলের খরা পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে অনুমান করা যায়। যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় তা যথার্থ রিজার্জও হয় না। ফলে ভূগর্ভস্ত পানির স্তর নিচেই নামছে।

২০২৩ সালে ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) পক্ষ থেকে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) উঁচু বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর ভূপৃষ্ঠ এবং ভূগর্ভস্থ পানি পরিস্থিতি নিয়ে হাইড্রোলজিক্যাল অনুসন্ধান ও মডেলিং শীর্ষক একটি গবেষণা হয়। এতে উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বাড়ছে পানি সংকটাপন্ন এলাকা। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে গড় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ২৬ ফুট নিচে। ২০২১ সালে ভূগর্ভস্থ পানির গড় আরো নিচে নেমে দাঁড়ায় ৬০ ফুটে।

ভরা বর্ষাতেও বরেন্দ্র অঞ্চলে খরাপ্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। গ্রীষ্মকালে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায় এ অঞ্চলে। এই পরিস্থিতিতে নতুন জারি করা সেচ নীতিতে সময়ের বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়ার সঠিকতার বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করা যেতে পারে। ভূউপরিস্থ পানির উৎস সন্ধান, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণই একমাত্র বিকল্প হতে পারে। এ নিয়ে দাবি দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। এ ব্যাপারে সরকারের কিছু উদ্যোগ আছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা ‘আত্মহত্যারই’ সামিল হবে। বরং ভূউপরিস্থ পানির উৎসগুলোর মধ্যেই সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রতি নজর দেয়াই হবে টেকসই উন্নয়নের পরিপূরক।