মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় যে মৌমাছির পতঙ্গের অবদান

আপডেট: মার্চ ১৮, ২০২৪, ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ

মৌমাছির জন্য প্রকৃতি নিরাপদ হোক

কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে মৌমাছির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। ক্ষুদ্র সমবায়ী এই প্রাণীটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষের প্রয়োজনেই প্রতিটি মৌমাছির জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পৃথিবীর জুড়েই মৌমাছির জীবন-জীবিকা ও মুক্ত চলাচলের ক্ষেত্রে মানুষই বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষেরই কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণের কারণে মৌমাছির পরিবেশ প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। মৌমাছির সংখ্যা ক্রমশই কমে আসছে। সেই সাথে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টিও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

মৌমাছি পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে উপকারী পতঙ্গদের একটি। বিশ্বব্যাপী যত ফুলের পরাগায়ন হয় তার সিংহভাগ হয় মৌমাছির মাধ্যমে। বাকিটা হয় পাখি, প্রজাপতি বা ছোটখাট কিছু পতঙ্গ দ্বারা। আর এই পরাগায়ন যদি না হয় তাহলে পর্যাপ্ত ও পুষ্ট ফুল, ফল, ফসল কোনোভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের নানা গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী মৌমাছির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করেছে বিগত কয়েকবছর ধরে। ইউরোপ, আমেরিকার অধিকাংশ দেশ বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তারা ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মৌমাছি টিকে থাকার প্রধান হুমকি যে কীটনাশকের ব্যবহার-এ বিষয়ে একমত প্রায় সব দেশ।

তাই মৌমাছি বাঁচাতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে নিষিদ্ধ করেছে মৌমাছির জন্য ক্ষতিকর সব কীটনাশকের উৎপাদন ও ব্যবহার। ব্রিটেনে মৌমাছির জন্য সাত মাইল দীর্ঘ করিডোর বানিয়েছে লন্ডন কাউন্সিল। এই করিডোরে বুনোফুলের সমারোহ সৃষ্টি করা হয়েছে মৌমাছির সংখ্যা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে।

পরিসংখ্যানের দিক থেকে, কীট-পতঙ্গের মাধ্যমে যেসব উদ্ভিদের পরপরা-গায়ন হয় তাতে শুধু মৌমাছির অবদানই ৮০% (অন্তত এক লাখ ৩০ হাজার উদ্ভিদ)। বর্তমানে মানুষ খাবার হিসেবে যে ফলমূল, শাক-সবজির ওপর বেশি নির্ভরশীল সেগুলোর ৭০% উৎপন্ন হয় মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে। পৃথিবীতে প্রতি বছরে যে পরিমাণ খাদ্য মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে উৎপাদিত হয় সেগুলোর আর্থিক মূল্য আনুমানিক ২২ হাজার কোটি ডলার।

এ অর্থনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী ১৪০ কোটি মানুষের জীবিকা। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাবারের জোগান দিতে প্রয়োজন বাড়তি উৎপাদন। মৌমাছির সহায়তা ছাড়া যা এক প্রকার অসম্ভব। তাই মৌমাছির জীবন হুমকির মুখে পড়লে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও হুমকির মুখে পড়বে।

বাংলাদেশেও মৌমাছির জীবন বিপদমুক্ত এ কথা বলার সুযোগ নেই। বরং ফসলে যচ্ছেতাই কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মৌমাছির জীবন সঙ্কটাপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মৌমাছির জীবনচারণের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ থাকলেও কৃষক পর্যায়ে তাও মানা হয় না। ফলে মৌমাছির সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোটেও চলতে দেয়া সমীচীন নয়। মৌমাছির জীবন-জীবিকা, বিচরণের ক্ষেত্র সমুন্নত রাখার উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময়। মৌমাছির জন্য প্রকৃতি নিরাপদ হোক।