মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় সর্বাধিক মৃত্যু

আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ


অভিভাবক পর্যায়েও সচেতনতা প্রয়োজন

দেশে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে অবশ্যই সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেশি এগিয়ে আছে। আবার সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অন্য যানবাহনের তুলনায় মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় এর চালক ও আরোহী মৃত্যুর হার সর্বাধিক। ২০২৩ সালে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার সামান্য কমলেও তা বিপজ্জনক অবস্থানে শীর্ষেই রয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ২৭ জানুয়ারি রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার উদ্বেগজনক তথ্য ও তথ্য বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে।

ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯১১টি। নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫২৪ জন এবং আহত ১১ হাজার ৪০৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭৪ (১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ), শিশু ১১২৮ (১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ)। ২ হাজার ৫৩২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২ হাজার ৪৮৭ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিহত হয়েছেন ২৪৮৭ জন (৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ)। সড়ক দুর্ঘটনায় অন্য যানবাহন এর আশপাশে নেই। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১৯০৯ জনের বয়স (৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ) ১৪ থেকে ৪৫ বছর। অর্থাৎ এ দুর্ঘটনায় শিশু ও তরুণদের সংখ্যাই বেশি। ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ (৯১৭টি) দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালক এককভাবে দায়ী ছিল। তবে আশার কথা এই যে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমেছে ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং প্রাণহানি কমেছে ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সরকারের নানামুখি পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলেই অনুমিত হচ্ছে। তবে এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। আরো কার্যকর পদক্ষেপ এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নতুন নতুন উদ্ভাবনি কাজে লাগানোর উপায় অনুসন্ধান করতে হবে।

মোটর সাইকেল চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা এবং না মানার প্রবণতা প্রবল। দেশে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর-যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নিহতের ঘটনাও বাড়ছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার একটি ব্যাপক অংশ ঘটছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ও বাসের ধাক্কা, চাপা এবং মুখোমুখি সংঘর্ষে। এসব দ্রুত গতির যানবাহন চালকদের বেশিরভাগই অসুস্থ ও অদক্ষ। এদের বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর কারণে যারা সতর্কভাবে মোটরসাইকেল চালান তারাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, বাবা-মার অসচেতনতা। তারা সন্তান স্নেহে আপ্লুত কোনো কিছু না ভেবেই মোটর সাইকেল কেনার আবদার পূরণ করছে। এ ক্ষেত্রে অনেক অভিভাবকই ভাবছেন না তার সন্তান মোটরসাইকেল চালানোর মত যোগ্যতা ও দক্ষতা আছে কী না। কিশোর ও তরুদের বড় অংশই মোটর সাইকেল চালনায় হিরোজমে আক্রান্ত হয়। সড়কে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। অভিভাবকদের এই আপত্য স্নেহের ফল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেদনার বার্তা বয়ে আনে। অভিভাবকদের এ ক্ষেত্রে সচেতন ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।