সবজির মৌসুমে সবজির অগ্নিমূল্য

আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

মধ্যস্বত্বভোগিদের প্রতিরোধ করা যাবে কি?

নিত্যপণ্যের দাম গেল বছর জুড়েই মৌসুমে সবজির বেশ উর্ধ্বমুখি ছিল। নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠেছিল। তারই জের নতুন বছরেও আছড়ে পড়েছে। মূল্যস্ফিতি নতুন সরকারের জন্য অগ্রাধিকার চ্যালেঞ্জিংÑ তা সরকারও মানছে। বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু বাজার তারমত করেই দামের ঘোড়ার সাথে ছুটছে। ভোক্তাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছেÑ নতুন সরকার সামাল দিতে পারবে তো? এই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া গেলে সেটা হতাশায় পর্যবসিত হতে পারে। সেটা মোটেও কাম্য নয়।

মৌসুমে সবজির বেসামাল বাজার যে আচরণ করছে তা এর আগে কখনোই লক্ষ্য করা যায় নি। এমনকি ২০২২ সালে শীতকালীন সবজির দরে স্বস্তি ছিল। কেননা ওই সময় সবজির সরবরাহ প্রচুর থাকে। কিন্তু এ বছর একেবারেই ব্যতিক্রম। শীতকাল শেষের পথে অথচ সবজিমূল্যের আগুন লেগেই আছে। নিম্ন আয়ের মানুষের স্বস্তি উবে গেছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করা যাচ্ছে না কোনোভাবে।

পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গেছে যে, দেশের উচ্চ আদালতকে পর্যন্ত মৌসুমে সবজির নির্দেশনা দিতে হচ্ছে। ২৮ জানুয়ারি জনস্বার্থে করা একটি রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন যে, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে কৃষি বিপণন আইন ২০১৮-এর (৪)(ছ) অনুসারে উৎপাদনস্থলে বাজার অবকাঠামো ও বাজার ব্যবস্থাপনা করার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন আদালত। সেই সঙ্গে কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে বিবাদিদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এই রিটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কৃষি অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদি করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য উদ্ধৃতি করে একটি সংবাদ মাধ্যম খবর দিয়েছে, এক কেজি বেগুন উৎপাদনে ১০ টাকার কিছু বেশি খরচ হয়। অথচ বিভিন্ন হাত ঘুরে রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে সেই সবজি ভোক্তাকে ১০ গুণেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আকার ও মানভেদে লম্বা ও গোল বেগুন বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত। আর এটা হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগিদের গড়ে ওঠা শক্ত সিন্ডকেশনের কারণে।

এই সিন্ডিকেট মোকাবিলার স্পষ্ট ব্যর্থতা লক্ষনীয়। বাংলাদেশে কৃষিবিপণনের আইন থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়ক ব্যবস্থা নেই। ফলে বিপণনের ভূমিকা পালন করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা এবং এ কারণে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য যেমন পাচ্ছেন না,মৌসুমে সবজির তেমনি সাধারণ ভোক্তাদেরও সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতির অবসান খুবই প্রত্যাশিত। শেষ পর্যন্ত সরকারের পদক্ষেপের দিকেই সবাই চেয়ে আছেন, যাতে করে মধ্যস্বত্বভোগোগিদের দৌরাত্ম্যের অবসান হয়।