দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হলো সর্বজনীন পেনশন মেলা II ‘সরকার পরিবর্তন হলেও সর্বজনীন পেনশন স্কিম অব্যহত থাকবে’

আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ১১:০৪ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীতে পেনশন কর্মসূচির প্রতি সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে প্রথমবারের মতো বিভাগীয় পর্যায়ে সর্বজনীন পেনশন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে হাজি মুহাম্মদ মুহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ শীর্ষক এক কর্মশালা সকালে রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে।

কর্মশালায় জানানো হয়, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ এর আওতায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে। ফলে এটি একটি সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়। সরকার আসবে সরকার যাবে, রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি অব্যহত থাকবে। সরকার পরিবর্তন হলেও সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু থাকবে।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়, এটা রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি যুক্ত স্কীম তাই এনজিওদের মত টাকা নিয়ে যাবে না। এমনকি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এ টাকা স্পর্শ করতে পারবে না, বিনিয়োগ করা ছাড়া। এ স্কীমে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর অসুস্থ হলে এক বছরের একটা গ্রেজ টাইম দেওয়া হবে এবং তার পর স্কিম আবার চালু করতে পারবে। ৬০ বছরের আগে মারা গেলে নমিনি টাকা তুলে নিতে পাবরে বা এটা চালিয়ে নিতে পারবে। এখানে এক স্কিম থেকে অন্য স্কিমে যাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। নিজেই সিস্টেমে ঢুকে পরিবর্তণ করা যাবে। জীবন বীমার পেনশন স্কীম নিলেও সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধন করা যাবে।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়, এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পেনশন তুলতে হয়রানি নেই; আর এটার ক্ষেত্রেতো প্রশ্নই নেই। এটি আইটি বেজড। সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্টে টাকা চলে যাবে, কোনো অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা। কর্মশালায় সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

মুখ্যসচিব বলেন, অর্থ বিভাগ অবকাঠামোগতভাবে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে কিন্তু তার একার পক্ষে এক্ষেত্রে সফল হওয়া সম্ভব নয়। এটা জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের সম্মিলিত কাজ। তিনি সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে আহবান জানান এবং একই সাথে এবিষয়ে অপপ্রচার প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন।

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অর্থরিটির এক্সকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহ এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান।

এরআগে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে নগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে বিভাগীয় পেনশন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ে জনঅবহিতকরণ এবং এ স্কিমের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এ পেনশন মেলার আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রাজশাহী বিভাগীয় পেনশন মেলা-২০২৪ এর উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে মুখ্যসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করেছেন সাধারণ মানুষ যখন অবসর গ্রহণ করবে, তাদের বয়স হয়ে যাবে, তখন তারা যেন নিরাপদে থাকে। নিশ্চিন্তে থাকে। সরকারি চাকরীজীবীদের মতো সকল মানুষ যেন পেনশন পায়। সে জন্য সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। আপনার সুদিনের কিছু টাকা আপনি জমা করবেন আপনার দুর্দিনে সরকার প্রতি মাসে আপনাকে টাকা দিতে থাকবে।

দেশের অর্থনৈতিক-অবস্থা অত্যন্ত মজবুত উল্লেখ করে মুখ্যসচিব বলেন, আপনি টাকা জমা না দেন সরকারের কিছু আসে-যায় না। কিন্তু সরকার আপনাদের জন্য একটা সুযোগ করে দিয়েছে। যেন ভবিষ্যতে কেউ বিপদে না পড়ে।

সর্বজনীন পেনশনের চারটি স্কিমের মধ্যে সমতা স্কিম প্রসঙ্গে মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, যারা সবচেয়ে দরিদ্র্য মানুষ, বছরে ষাট হাজার টাকার নিচে আয়, তারা যদি মাসে পাঁচ শত টাকা জমা দেয় তবে সরকার তার পক্ষে হয়ে আরও পাঁচশত টাকা ওইখানে দেবে। এভাবে বিয়াল্লিশ বছর পাঁচ শত টাকা করে জমা দিলে প্রতি মাসে পেনশন পাবে ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা। টাকা জমা দিতে দিতে মারা গেলে ছেলে-মেয়েরা এককালীন টাকা পেয়ে যাবে ও পেনশন ভোগ করার পর ৭৫ বছরের আগে মারা গেলে বয়স (তার) ৭৫ বছর হয়া পর্যন্ত তার পরিবার পেনশন পাবে।

প্রবাস, প্রগতি ও সুরক্ষা স্কিমের সুবিধা তুলে ধরে মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এসব স্কিমে সর্বোচ্চ চাঁদা দাতারা এখন ১ জন সচিব যে পেনশন পান ৪-৪গুণ বেশি পেনশন পাবেন। এসময় তিনি সর্বোচ্চ সুবিধা পায়ার জন্য আগে-ভাগে চাঁদা জমাদান’র পরামর্শ প্রদান করেন।

রাজশাহী বিভাগীয়-কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অর্থরিটির এক্সকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ফসিউল্লাহ।
মেলায় রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন । মেলায় বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইউডিসি’র ১২৫টি স্টল ছিলো।

মেলা থেকে জানানো হয়, এ পেনশন স্কিম নিবন্ধন কর্মসূচিতে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী জেলা। www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটের পাওয়া সর্বশেষ তথ্য মতে ৬ হাজার ১২৩ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে বগুড়া জেলায় নিবন্ধন করেছে ২ হাজার ৯৪ জন, পাবনায় ১ হাজার ৫৫, সিরাজগঞ্জে ৬৭৮, নাটোরে ৬০৮, জয়পুরহাটে ৬১৩, নওগাঁয় ৪২৬ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৪১ জন। এ তথ্যের আলোকে বিভাগীয় পর্যায়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিবন্ধন কর্মসূচিতে রাজশাহী জেলা অবস্থানে রয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। সেদিন থেকেই ১৮ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকরা www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করছেন। চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন স্কিম রয়েছে। এগুলো হলো- প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাসী’ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’।