হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

আপডেট: মার্চ ২৪, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

আরএমপির উদ্যোগ প্রত্যাশিত

হিজড়া-আতঙ্ক শুধু রাজধানীতেই নয়- দেশের সর্বত্রই একই পরিস্থিতি। দলে দলে হিজড়াদের বলপূর্বক চাঁদাবাজি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। একটা সময় ছিল হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের দান-খয়রাত যা-ই দেয়া তা তারা খুশি মনেই গ্রহণ করতো। কিন্তু ইদানিং তারা এতো বেশি মাত্রাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, সামাজিক সমস্যা তৈরি করে চলেছে। ভীতি ছড়াচ্ছে জনমনে। ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ ঘোষণা দিয়েছে, চাঁদাবাজ হিজড়াদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হিজড়ারা রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস, যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে অনায়াশেই অপদস্ত-নাজেহাল করছে। তাদের সঙ্গে তর্ক করলে হেনস্তা তো করছেই উপরন্তু অশোভনীয় আচরণ করছেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে লোকজনকে। তাদের কবল থেকে রেহাই পাওয়া বা মানসম্মান বাঁচানো বড়ই দুরূহ হয়ে পড়ে।

হিজড়ারা গ্রামের মানুষের বিয়ে-জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে অতিথিদের সামনেই তাদের জিম্মি করে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করছে। কোনো পরিবারে শিশু জন্মনিলে তো হিজড়ারা হামলে পড়ে। ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা দাবি করে বসে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারলে রীতিমত হাঙ্গামা বাধিয়ে দেয়। এদের নিয়ে পত্র-পত্রিকায় তাদের মানবাধিকার নিয়ে যেমন খবর হয়, তেমনি তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির নিয়েও খবর হয়। কিন্তু চাঁদাবাজ হিজড়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এর ফলে সাধারণ মানুষ হিজড়া নিয়ে অনিরাপদ বোধ করে।

চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে, নারী-পুরুষের ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনে এক্স-এক্স প্যাটার্ন হলে তা হয় কন্যা শিশু আর এক্স-ওয়াই প্যাটার্নে জন্ম নেয় ছেলে শিশু। জরায়ুতে ভ্রুণের বিকাশ হওয়ার সময় মায়েদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হয়। আর এক্স- এক্স- ওয়াই, আবার এক্স-ওয়াই-ওয়াই এর প্যাটার্নে ছেলে বা মেয়ে শিশু হয়ে থাকে। এরপর জেনেটিক পরির্বতনের কারণে কেউ হিজড়ায় পরিণত হয়।

হিজড়াদের প্রকারভেদ আছে। শারীরিকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নারী বৈশিষ্ট যাদের, তাদের বলা হয় অকুয়া। অন্য হিজড়াদের বলা হয় জেনানা। আর মানুষের হাতে সৃষ্ট বা ক্যাসট্রেড পুরুষদের বলা হয় চিন্নি। সত্যিই যদি কেউ হিজড়া হয়ে থাকেন এটি তার কোনো দোষের নয়, প্রকৃতির নিয়মেই তা ঘটে। যেমনটি ঘটে থাকে একজন প্রতিবন্ধীর ক্ষেত্রে।

হিজড়ারা সামাজিক মর্যাদা নিয়ে মূলস্রোতধারার সাথেই বসবাসের অধিকার রাখে। সরকার তাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। হিজড়া সম্পর্কে মানুষের ধারণাও পাল্টাচ্ছে কিন্তু তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি নানাবিধ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। তবে সব হিজড়াই যে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত ব্যাপারটা তেমন নয়। অনেকেই সমাজে আত্মমর্যাদা নিয়ে বসবাস করছেন।

হিজড়াদের দৌরাত্ম্য উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ চাঁদাবাজ হিজড়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দিয়েছে। শনিবার (২৩ মার্চ) ডিএমপি কমিশনার তৃতীয় লিঙ্গের কেউ বাসা-বাড়িতে, সড়কে ও যানবাহনে চাঁদাবাজি করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন। রাজশাহীর হিজড়াদের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটান পুলিশ এ ব্যাপারে সজাগ হবে এবং চাঁদাবাজ হিজড়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে এটা নগরবাসীর প্রত্যাশা।