১২৫ শিক্ষার্থীর ভর্তি পরিক্ষা রেলওয়ে ও রাবি কর্তৃপক্ষের অসাধারণ কৃতিত্ব

আপডেট: মার্চ ৮, ২০২৪, ১০:৫৪ অপরাহ্ণ

হোক না বিলম্ব, নিয়মের একটু ব্যত্যয়- কিন্তু যা হয়েছে ভালই হয়েছে, মানবিক হয়েছে। ১২৫ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন রক্ষা হয়েছে। সম্ভবত বাংলাদেশে এমন একটি অ্যাডভেঞ্চার এটাই প্রথম। এর পুরো সফলতা বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। উভয় কর্তপক্ষকে জানাই সালাম ও অভিনন্দন। দেশ জুড়েই এই কর্ম-উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে।

সোনার দেশ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, যান্ত্রিক ত্রুটিজনিতে কারণে ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পারায় রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছিলেন প্রায় ১২৫ জন শিক্ষার্থী। তবে শেষ মুর্হূতে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার এবং বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আব্দুস সাত্তার সাব্বিরের মানবিক ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ওই শিক্ষার্থীরা পরিক্ষা দিতে পেরেছেন।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল ৬ টায় রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকায় কমলাপুর স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আগের দিন ওই ট্রেনে কিছু কাজ করা হয়েছিল, যার পর যাত্রার দিন ভোরে আর ট্রেনটির ইঞ্জিন চালু করা যাচ্ছিলো না। প্রকৌশলীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে নয়টা নাগাদ ইঞ্জিন সচল করতে সক্ষম হন। এর মধ্যে তিন ঘণ্টার বিলম্ব দেখে পরীক্ষার্থীরা অনেকে স্টেশনের গার্ডদের কাছে যায় এবং বেলা তিনটার মধ্যে তাদের রাজশাহী পৌঁছানো দরকার বলে জানায়। গার্ড তাৎক্ষণিক রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে জানান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা কন্ট্রোলকে কল দিয়ে জানান এই ট্রেন পথে নির্ধারিত কোনো স্টেশনে আর কোথাও দাঁড়াবে না।

এমন কী ক্রসিং পড়লে এ ট্রেন বন্ধ না করে উল্টো দিক থেকে আসা ট্রেনকে আগেই বন্ধ করে রাখতে হবে। এভাবেই এটা চলবে।
অবশেষে ট্রেনটি সোয়া নয়টায় ঢাকা ছেড়ে রওনা হল। ভেতরে উদ্বিগ্ন শত শত পরীক্ষার্থী আর বিভিন্ন স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া অন্য যাত্রীরা।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌঁছানোর পর সোয়া তিন ঘণ্টা বিলম্বে রওনা দেয়া ট্রেনটির ইঞ্জিন আবার বিকল হয়ে পড়ে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হতোদ্যম না হয়ে দ্রুত ঈশ্বরদি থেকে ট্রেনের ইঞ্জিন নিয়ে তা ধূমকেতুর সঙ্গে সংযুক্ত করে ট্রেন রাজশাহী আনা হয়। এই ভ্রমণ প্রকৃতঅর্থেই বিস্ময়কর ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়টিকে অত্যন্ত মানবিকভাবে গ্রহণ করেন।

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) ভর্তি পরীক্ষা মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ৪ টায় শুরু হয়। মানবিক দিক বিবেচনায় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ করে দেন। নিয়মানুযায়ী পরিক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পরে কেন্দ্রে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। ১২৫ শিক্ষার্থী ২০ মিনিট বিলম্বে কেন্দ্রে প্রবেশ করে।

নিয়মের নিরিখে সবকিছু যে বিবেচিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়- এই ঘটনা তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো। ঘটনার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়Ñ এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নিয়মের সাথে সামিল করা যায় না। কিন্তু নিয়মই তো শেষ কথা নয়। উপজীব্য বিষয় এবং এর তাৎক্ষণিক চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মের বাইরে গিয়েই করতে হতে পারে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মের সামান্য ব্যত্যয় ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যে উদারতা ও মানবিক উদাহরণ রাখলেন তা অবিশ্বাস্য যা আগামীতে দায়িত্বশীলদের উদ্বুদ্ধ করবে।