৩০০ কোটি টাকার প্রতারণা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

মানুষ আর কতকাল অসচেতন থাকবে!

এ দেশে লোভের বশীভুত হয়ে প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়া লোকের সংখ্যা মোটেও কম নেই। প্রতারক চক্র ওইসব মানুষদের সম্পর্কে খুব ভালই জানে। তারা কখনো ধর্মের নামে, কখনো বা বিপুল লাভের প্রলোভন দিয়ে ওই লোকদের দ্রুত আশ্বস্ত করাতে পারে। লোভী মানুষ মোটেও বিলম্ব করে নাÑ নির্বিকার লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারকের হাতে তুলে দেয়। তারপর যা হবার তা হয়। এক পর্যায়ে প্রতারকচক্র বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায়। প্রতারণা আর বিনিয়োগকারীরা হাঁ-পিত্যেস করে থাকে, পুলিশের দ্বারস্ত হয় এবং প্রতারকের শাস্তি দাবি করে। এমন ঘটনা দেশে ভুরি ভুরি। মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে এসব প্রতারণার সংবাদ ফলাও করে ছাপানো হয়। কিন্তু তাতে ওই লোভী মানুষদের মোটেও হুস হয় না। বেশি লাভের আশায় প্রতারকচক্রকে গচ্ছিত টাকা নির্দিদ্বায় তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়। এই বুঝি সব দুঃখের অবসান হয়!

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এমনই এক খবর জানা গেল। নামসর্বস্ব অনলাইন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়ে একদল মানুষ নগরীতে প্রতারণা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। আন্দোলনকারীরা অর্থ ফেরত পেতে ও প্রতারকদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। মানববন্ধন থেকে দেয়া তথ্যমতে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট নামক অনলাইন প্রতিষ্ঠানে রাজশাহীর ২ হাজার মানুষ ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগকারীদের দাবি ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অনলাইন ফরেক্স মার্কেটে বিনিয়োগের নামে মিথ্যা প্রলোভনে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এক লাখ টাকার বিপরীতে প্রতিমাসে রেমিটেন্স আকারে ১১ হাজার ২০০ টাকা করে মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দেয়া হয়েছিল। একজন সুস্থ মানুওেষর পক্ষো এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন।

লোভ যে মানুষের বুদ্ধি বিবেচনাকে অসাড় করে দেয়, এই ঘটনা তার একটি উদাহরণ হতে পারে। অর্থনীতি কিংবা ব্যাংকিং সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকলে এই প্রতারণার জালে তাদের আটকাতে হতো না। প্রতিমাসে এক লাখে রেমিট্যান্স আকারে ১১ হাজার ২০০ টাকা মুনাফাÑ এটা কীভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয় তা ধারণা করেও কোনো কুল-কিনারা পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা ঠিকই এ ব্যাপারে সহজ ধারণা করে নিয়েছেনর। এটা কি ওইসব মানুষের সরলতা নাকি সীমাহীন লোভ? যেখানে এক লাখ টাকায় প্রতিমাসে ১২ শো টাকা মুনাফা দেয়াই অবিশ্বাস্য বর্তমান সময়ে। এখন এর দায়-দায়িত্ব কার? যিনি বিনিয়োগ করেছেন নিজ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- তার দায়ং তিসি কাকে দিবেন? তারাই এখন প্রতারকচক্রের শাস্তি দাবি করছেন, তাদের অর্থ ফেরতের দাবি জানাচ্ছেন।

তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর কী এ দায় এড়াতে পারে? না তারা তা পারেন না। প্রতারকচক্র কীভাবে তাদের প্রতারণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন? প্রতারকরা তো মাঠ পর্যায়ে কাজ করে, মানুষকে সম্পৃক্ত করেই প্রতারণা করে। সবার চোখ ফাঁিিক দিয়ে এ ধরনের তৎপরতা কীভাবে চালিয়ে যেতে পারে? মনিটরিঙের ব্যবস্থা আছে বলেও মনে হয় না। এলাকায় নতুন কোনো উদ্যোগ, তৎপরতা পরিলক্ষিত হলে তা স্থানীয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও থানা পুলিশের নজরদারিতে থাকা কিংবা আনার একটা ব্যবস্থা থাকা উচিৎ নয় কি? ভূয়া কম্পানি কিংবা এনজিও সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কার্যক্রমও থাকা বাঞ্ছনীয়। পূর্বেই প্রতারকচক্রকে শনাক্ত করা গেলে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব হবে। পুলিশ তৎপরতা শুরু করেছে। আশা করা যায়, প্রতারকচক্র ধরা পড়বে। বিনিয়োগকারীরা অর্থ ফিরে পাবেন।