৫০০ বছরের বাঘা শাহী মসজিদের শিলালিপিতে ঐতিহ্য বহন করছে আম

আপডেট: এপ্রিল ১, ২০২৪, ১:১৮ অপরাহ্ণ


আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী) :


রাজশাহীর বাঘায় প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন ৫০০ বছরের পুরোনো বাঘা শাহী মসজিদের শিলালিপিতে আমের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। ১৫২৩-১২২৪ খিস্টাব্দ মোকাবেক ৯৩০ হিজরিতে হোসেন শাহ্রে পূত্র নুসরাত শাহ এই শাহী মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদের শিলালিপিতে আমের টেরাকোটা অংকিত আছে। যা থেকে প্রমাণ হয় বাঘার আমের সুখ্যাতি প্রাচীন আমল থেকেই স্বীকৃত।

জানা যায়, রাজশাহী জেলা সদর থেকে ৪৯ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে বাঘায় এই ঐতিহাসিক শাহী মসজিদটির অবস্থান। ২৫৬ বিঘা জমির উপর এই মসজিদ নির্মিত হয়েছে। সমভূমি থেকে ৮-১০ ফুট উঁচু করে মসজিদের আঙিনা তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের উত্তর পার্শ্বের ফটকের ওপরের স্তম্ভ ও কারুকাজ ধ্বংস হয়ে গেছে। মসজিদে ১০টি গম্বুজ আছে। তার ভেতরে রয়েছে ৬টি স্তম্ভ। মসজিদে ৪টি মেহরাব রয়েছে, যা বিশেষ কারুকার্য দ্বারা খচিত।

মসজিদের দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট, প্রস্থ ৪২ ফুট, উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। দেয়াল চওড়া ৮ ফুট, গম্বুজের ব্যাস ৪২ ফুট, উচ্চতা ১২ ফুট। চৌচালা গম্বুজের ব্যাস ২০ ফুট, উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। মাঝখানের দরজার ওপর ফারসি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। মসজিদটির গাঁথুনি চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত। মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে মেহরাব ও স্তম্ভ রয়েছে।

সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহের ছেলে নাসিরউদ্দীন নসরত শাহ মসজিদের সামনে ৫২ বিঘা জমির ওপর দীঘি খনন করেন। ১৯৯৭ সালে মাজারের পশ্চিম পাশে খনন কাজের ফলে ৩০ ফুট বাই ২০ ফুট আয়তনের একটি বাঁধানো মহল পুকুরের সন্ধান পাওয়া যায়। মসজিদটির ছবি ৫০ টাকা নোটে ও ১০ টাকার ডাক টিকিটে বিদ্যমান। মসজিদের ইট ধূসর বর্ণের। এ ইটের দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি, প্রস্থ ৬ ইঞ্চি এবং চওড়া দেড় ইঞ্চি। বর্তমান যুগের ইটের চেয়ে এর আকৃতি একেবারেই আলাদা। দর্শনার্থী ও নামাজিদের ওঠা নামার জন্য মসজিদের পূর্বদিকে রয়েছে প্রবেশ পথ।

বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের দেয়া তথ্য মতে, হযরত শাহদৌলা (রহ.) এর পুত্র হযরত শাহ আব্দুল হামিদ দানিশ মন্দ (রহ.) এর মৃত্যুর পর তাঁর তৃতীয় পুত্র মাওলানা শাহ আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) বাঘার খানকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৫০০ বছর আগে ৫ জন সঙ্গীসহ বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য বাঘায় এসেছিলেন হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রহ.)। তিনি বসবাস শুরু করেন পদ্মা নদীর কাছে কসবে বাঘা নামক স্থানে। আধ্যাত্মিক শক্তির বলে এ এলাকার জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারের ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন তিনি। এ সময়ে শাহদৌলার অনেক অলৌকিক কীর্তি দেখে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাঁর কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়।

উপজেলায় ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। উপজেলায় উল্লেখয্গ্যে আমের মধ্যে গোপাল ভোগ, হিমসাগার, আম্রপালি, ল্যাংড়া, তোতাপরি, ফজলি, লকনা। এই আম রপ্তানি করা হচ্ছে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্স, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, হংকং, ডেনমার্ক, ইতালি, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউলাহ্ সুলতান বলেন, ইতোমধ্যে বাঘার আম দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের সহায়তায় ২০১৬ সাল থেকে আম বিদেশে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। তাঁর সহায়তায় গত মৌসুমে ৩৬ মেট্রিক টন আম বিদেশে পাঠানো হয়। এবারে ১০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে।

এ বিষয়ে ওয়াকফ এস্টেটের বর্তমান মোতয়াল্লি খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম রইশ বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাঘা মসজিদকে ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত করেছে। মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পুরোনো নকশা অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কারের দায়িত্ব এখন তাদের। #