আমাদের আসন হোক সুস্থ অসাম্প্রদায়িক কাতারে

আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

গোলাম কবির


ভুবনজুড়ে লেখার ক্ষেত্র! কী লেখবো, কাকে নিয়ে লেখা যায়, কোনটি মানুষ গ্রহণ করবেন, সে ধারণাও প্রায় অবলুপ্ত। চেয়ে দেখা আর কানে শোনা ছাড়া আর কোনো মাধ্যম আমার নেই। তাই নিয়েই লেখতে হয়। লেখি। কে জানে কারো মস্তিষ্ক তা কতটুকু গ্রহণ করে কী না। আমার বিশ্বাস, অনেকে চেয়েও দেখে না। সে বিশ্বাস রেখে আপন মনে লেখে যাওয়া।

সম্মানজনক কোনো চাকরিতে না গিয়ে শিক্ষা তার থিতু হলাল। না তেমন আহামরি নয়। সরকারি কলেজে। তবে তা সুলভ ছিলো না। এমএ. পাসের পর ছ’মাসে দুটি কলেজের অভিজ্ঞতা শেষে চ.ঝ.ঈ তে উত্তীর্ণ হয়ে গেলাম নোয়াখালি। কেউ সুপারিশ করার ছিলো না বলে নবাবগঞ্জ থেকে নোয়াখালি। নোয়াখালি নামের সাথে পরিচয় ছিলো; কিন্তু কাপ্তাই তেমনভাবে চিনতাম না; ওই চ.ঝ.ঈ. র পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে পর্যন্ত (১৯৭০)।

উদ্দেশ্য, লেখাপড়ার সাথে পরিচিত হওয়া। কারণ শিক্ষার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রথম কারিগর ছিলেন নোয়াখালির ফরিদগঞ্জের মানুষ। মাওলানা নজিবুল্লাহ। নোয়াখালিতে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খেলাম। জনৈক শিক্ষকের আচরণে। যোগদানের সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তিনি লোভ দেখালেন অসুস্থতার দরখাস্ত করলে আর কিছু ওষুধের রশিদ জমা দিতে হবে। তাতেই আমাকে দিবেন দেড়হাজার।

বাকি এক হাজার তিনি এবং অফিস ভাগ করে নেবে। তখন ক্লাস ওয়ান অফিসারের বছরে আড়াই হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা ছিলো। আমি বিস্মিত হলাম একজন শিক্ষক এমন বাটপারি করতে পারে! শিক্ষকতা জীবনের প্রথমেই আমার এই অভিজ্ঞতা অদ্যাবধি লালন করে চলেছি। তবে আমরা শিক্ষক সমাজ কত অধপতিত তার বর্ণনা দেয়া কঠিন। আমরা সবাই পদলেহনে ব্যস্ত, কোন পথ দিয়ে কীভাবে ওপরে ওঠা যায় এবং চোখে লাগা বাড়ি-গাড়ি করা যায়। আমাদের সমাজের এই অধঃপতন কি কেবল পয়সা দিয়ে রোধ করা সম্ভব! যতক্ষণ পর্যন্ত যার যতটুকু প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া না হোক, ততদিন আমরা অন্ধকারেই থাকবো। ইতিহাসে বহু শিক্ষকের জীবন আমরা দেখেছি। যাঁদের সমাজপতিরা জোর করে শিক্ষকতায় এনেছেন।

শেষ পর্যন্ত থেকে গেছেন একই পেশায়। সমকালে এবং এখানে তাঁরা নমস্য হয়ে আছেন। অবশ্য সৈয়দ মুজতবা আলী বর্ণিত শিক্ষকের দুর্দশার কথা স্মরণে রেখেই বলছি। না, সে দিন আর নেই, শিক্ষকের খাওয়া পরার ব্যবস্থা সরকারিভাবে এখন চলছে। কুকুরের এক পায়ের সমান নয়। অথবা রবীন্দ্রনাথের ছেলে বেলার স্কুলের শিক্ষকদের মতোও নয়। আমরা ‘জাতে মাতাল তালে ঠিক’ রেখেই চলছি। তারপর সুযোগ পেলেই সংশ্লিষ্টদের তুলোধুনা করি। এক্ষেত্রে আমাদের বাহাদুরী কম দেখাই না। নির্বাচনের পর বিজয়ী নেতাদের সম্মান জানাতে আমরাই এগিয়ে আসি। নিজের অবস্থান ভুলে যাই। লাঞ্ছনা ভুলে গিয়ে আত্মসমর্পণ কৃতিত্ব নয়। কৃতিত্ব নিজের এবং শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটানোর। আমরা সব ভুলতে বসেছি। এতে নিজের কিংবা দেশের কোনো উন্নতি ঘটানো যায় না।

আঁধার আরো ঘনিয়ে আসে। আঁধার মানুষকে মুক্তি দেয় না। কেবল শ্রেণিকক্ষ আলোকিত করলে চলবে না। গোটা সমাজকে সততার আদর্শ দিয়ে আলোকিত করতে পারলে আমাদের মুক্তি, ধার করে নয়।

এক সময় শিক্ষক সমাজের প্রধান বিচারক হতেন এবং কোনো কোনো শিক্ষকের নামে ওই পরিবেশের নামকরণ হতো। কালান্তরের সেসব বাস্তবতা এখন কল্পালোকের কাহিনি। আমরা তা উস্কে দিতে চাই না। চাই সুস্থ বিভাজনহীন অসাম্প্রদায়িক সমাজ দেখতে। আমাদের সকল আশা যেন সে পথে ধাবিত হয়। তাতেই মুক্তি।
লেখক : সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ