টঙ্গি, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রামে পাকসেনার গুলিতে বহু হতাহত

আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:৫মার্চ, ১৯৭১ : এদিন শুক্রবার ছিল। সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির সার্বিক স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামের ৫ম দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকাসহ সারা পূর্ব বাংলায় সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। এদিন টঙ্গি, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করে স্বাধীনতাকামী মানুষকে। টঙ্গিতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গুলিতে ২২ জন ও খুলনায় ১৮ জন নিহত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা টঙ্গি তুরাগ নদীর ওপর পাকা ব্রিজের পাশের কাঠের পুরাতন পুলটি উড়িয়ে দেয়। বড় বড় গাছ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। চট্টগ্রামের ৫ দিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২২২ জনে।

রাজশাহীতে এদিন অনেক হতাহত হয়। এদিন ঢাকায় কেজি মোস্তফার নেতৃত্বে সাংবাদিকদের সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। হাসান ইমাম ও গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমীতে শিল্পীদের সভা হয় এবং আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করা হয়। শহিদ মিনারে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভা এবং একই স্থানে সরকারি ও বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এয়ার ওয়েজ কর্মচারী ইউনিয়ন, ট্যানারি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ডাকসুর উদ্যোগে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

পাকিস্তানের শাসক ও শোষকেরা ক্রমান্বয়ে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন ও হত্যার হার বাড়িয়ে দিল। তাদের এই চিরাচরিত নির্মম আচরণ দেখে এটা ভাববার অবকাশ ছিল না যে, ধর্মীয় সূত্রে হলেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানিরা একে অপরের ভাই। বরং তারা বাঙালিদের একটি অচ্ছুত জাতি হিসেবেই গ্রহণ করলো। কিন্তু এই শোষণ-বঞ্চনার ভার বাঙালিরা মুখ বুঁজে মেনে নেয়নি। সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদী ও প্রতিরোধী হয়ে উঠলো। বাঙালির চোখে-মুখে হিংস্রতাকে পরাজিত করার দীপ্ত শপথ; প্রজ্জলিত রোষের আগুনে পাকিস্তানিদের ভস্ম করতে থাকলো।

এদিন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহম্মদ এক বিবৃতিতে হানাদার বাহিনী কর্তৃক ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেটসহ এদেশের অন্যান্য স্থানে নিরস্ত্র জনগণের উপর বেপরোয়া নির্বিচার গুলি বর্ষণের ঘটনায় গভীর ঘৃণা প্রকাশ করেন।

অ্যাসোসিয়েট প্রেস অব পাকিস্তান সেনা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে যে, আজ থেকে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঢাকায় অবস্থানরত এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান ঢাকার ধানমন্ডীর ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মো. কাসেম লাহোরে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ ইয়াহিয়া খান আহুত ঢাকা বৈঠকের বিরোধিতা করে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশন আহ্বানের দাবি জানান।

করাচিতে এদিন জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তাকে অনেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন যে, দেশের দুই অংশের বিচ্ছিন্নতা অথবা আওয়ামী লীগের ৬ দফা এর মধ্যে কোনটি তিনি গ্রহণ করবেন? ভুট্টোর উত্তর-“এ দুইয়ের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য আছে কী?

এদিন ক্রুদ্ধ জনতা কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানের পতাকা ও কায়েদে আযমের ছবি ভস্মিভুত করে।