বঙ্গবন্ধুর সাথে ইয়াহিয়ার দেড়শো মিনেটের বৈঠক

আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:১৬ মার্চ, ১৯৭১ : সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাষ্ট্রীয় নীতি ও শাসনতান্ত্রিক প্রশ্ন সম্পর্কে দেড়শো মিনিট স্থায়ী এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন।

বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন ত্যাগ করার সময় অপেক্ষমান সাংবাদিকদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন এবং আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’
আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে জনৈক বিদেশি সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আলোচনা চলছে এবং আরো চলবে। এর বেশি কিছু আমার বলার নেই।’

অপর এক বিদেশি সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, আলোচনা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে কিনা? বঙ্গবন্ধু মুহূর্তকাল চিন্তা করে বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছে যতটুকু বলেছি এর বেশি কিছু আমার আর বলার নেই। এ সম্পর্কে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না।’

পরক্ষণেই কী ভেবে বঙ্গবন্ধু একটু হেসে বললেন, ‘আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং এর জন্য বেশ সময়ের প্রয়োজন। বিষয়টি দু’এক মিনিটের ব্যাপার নয়।’ এরপর সাংবাদিকরা তাঁকে জেঁকে ধরে প্রশ্ন করতে থাকলে তিনি বলেন- ‘আর কোনো মন্তব্য করবো না।’

বঙ্গবন্ধু মুজিব কালো পতাকা শোভিত একটি সাদা মাজদা গাড়িতে করে প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। তাঁর গাড়ির উইন্ড স্ক্রিনে বাংলাদেশের নতুন পতাকা এবং তাঁর দলের নির্বাচনি প্রতীক ‘নৌকা’ উৎকীর্ণ ছিল। এ সময় প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে দিয়ে কিছু পুলিশের গাড়ি যাতায়াত করে। সেসব গাড়িও কালো পতাকা শোভিত ছিল। তাঁর গাড়িটি বেলা ১১টা বাজার দু’মিনিট পূর্বে হেয়ার রোডস্থ কড়া প্রহরাধীন অবস্থায় এলাকায় প্রবেশ করে। তাঁর সাথে অপর একটি জিপে করে কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা ও নবনির্বাচিত পরিষদ সদস্য প্রেসিডেন্ট ভবনের বহির্দ্বার পর্যন্ত গমন করেছিলেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ এদিন এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন যে, সেনাবাহিনী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হোস্টেল, জোহা হল ও মুন্নুজান হলে, যশোর ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়, খুলনা চট্টগ্রাম ও ঢাকার ইপিআর ক্যাম্প, ফার্মগেট, রামপুরা ও কচুক্ষেত এলাকায় স্বাধীনতাকামী জনগণ ও অন্যান্যের প্রতি নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
পরিষদ আরো অভিযোগ করে যে, বহু লোককে এ পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে। মা-বোনদের ওপর জুলুম করা হয়েছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এদিন দিল্লি থেকে ভারত সরকারের একটি ঘোষণার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ভারত তাদের আকাশসীমার ওপর পূর্ব পাকিস্তানগামী সকল বিদেশি বিমানের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সংবাদ সংস্থা আরো জানায়, বিদেশি বিমানযোগে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য নিয়ে যাওয়া বন্ধ করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দিল্লি মনে করছেন।

এদিন লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার এক রিপোর্টে আওয়ামী লীগের একটি সংগ্রাম কমিটির বর্ণনা দেয়া হয়। যারা প্রদেশে গঠিত এ ধরনের অন্যান্য কমিটির মত এই কমিটিরও আলোচনার বিষয় ছিল। তাদের বিবেচনায় ইতোমধ্যেই স্বাধীন হয়ে যাওয়া পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ ‘বাংলাদেশে’ তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। ৫৮টি গ্রাম থেকে প্রায় শ’তিনেক লোক এই সংগ্রাম কমিটিতে একত্রিত হয়েছে। তারা প্রয়োজন বোধে সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

এদিকে ভারতে স্টেটম্যান পত্রিকায় বলা হয়- মি. মুজিবুর রহমান কতিপয় নির্দেশ জারি করে বলেছেন যে তিনি ‘বাংলাদেশ’-এর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছেন। পত্রিকা আরো জানায়, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন প্রেসিডেন্ট আমাদের অতিথি হবেন।’ ঢাকায় পর্যবেক্ষকরা এর এই অর্থ নিয়েছেন যে, পূর্ব পাকিস্তান নিজেকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বতন্ত্র একটি এলাকা বলে মনে করে।
এদিন চিন থেকে আমদানিকৃত সমরাস্ত্র একটি জাহাজ থেকে খালাস করতে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মীরা অস্বীকৃতি জানায়।
কবি আহসান হাবিব এদিন তাঁর সিতারা-ই-খেদমত খেতাব বর্জন করেন।