বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:২০ মার্চ, ১৯৭১ : সংগ্রামী বাংলার অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর শীর্ষ ৬ সহকর্মীকে নিয়ে এদিন প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে এক আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। ১.৩০ মি. আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীরা সহাস্য বদনে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন।
বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মদ, মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান, খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ও ড. কামাল হোসেন। অপরপক্ষে প্রেসিডেন্টের সাথে ছিলেন, বিচারপতি এম.আর কর্নেলিয়াস, লে. জে. পীরজাদা ও জজ এটর্নি জেনারেল (আর্মি) কর্নেল হাসান ।
বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। সংকট সমাধানের পথে তারা এগোচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘উভয় দলের উপদেষ্টাদের বৈঠক চলবে এবং তিনি ইয়াহিয়া খানের সাথে আগামীকাল সকালে পুনরায় মিলিত হবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনা চালু রয়েছে এবং আমরা অগ্রসর হচ্ছি।’ আলোচনায় পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন নেতাদের সাথে পৃথকভাবে এ ব্যাপারে আলোচনা করবেন। প্রয়োজন হলে আমরাও যৌথভাবে পাকিস্তানি নেতাদের সাথে আলোচনা করতে পারি।’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন কি না-বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা দেশের রাজনীতি সম্পর্কে আলোচনা করছেন।’ আলোচনায় আপনি কি সন্তুষ্ট?- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘আমি যখন বলি আলোচনার কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, তার থেকেই আপনারা বুঝতে পারেন।’ আলোচনা কতদিন চলবে?- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবশ্যই অনির্দিষ্টকালের জন্য আলোচনা চলতে পারে না। তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন এবং এর বেশি কিছু তিনি এখন আর বলবেন না।’
এদিন জনাব ভূট্টো করাচিতে বলেন যে, প্রেসিডেন্টের নিকট তিনি যে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন, তার সন্তোষজনক জবাব পেয়েছেন। ফলে ২০ সদস্যের একটি দল নিয়ে তিনি পরের দিন ঢাকার পথে রওনা হবেন বলে ঘোষণা দেন।
এর আগে আলোচনায় সাহায্য করার জন্য প্রেসিডেন্ট কতিপয় পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দকে ঢাকায় এসে আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানান। এদের মধ্যে মমতাজ মো. খান দৌলতানা ও মুফতি মাহমুদ সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসেন। কিন্তু জুলফিকার আলী ভূট্টো প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণের কারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা চেয়ে একটি তারবার্তা প্রেরণ করেন।
বঙ্গবন্ধু এদিন থেকে বিবৃতিতে বলেন, ‘ইতিপূর্বে ঘোষিত ব্যাখ্যাসহ সকল নির্দেশ ও নতুন নির্দেশ সাপেক্ষে ১৪ মার্চ ঘোষিত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং ২৩ মার্চ প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সারা বাংলাদেশে ছুটি পালিত হবে। সামরিক সরকার ইতিপূর্বে এই দিনটিকে পাকিস্তান দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন।
এদিন হংকং-এর ফার ইস্টার্ন রিভিউ সংখ্যায় লেখা হয়- “ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন পশ্চিম পাকিস্তানে তার পরবর্তী উদ্যোগের কথা ভাবছিলেন, তখন শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঢাকার বাড়িতে আমাদের প্রতিনিধিকে বললেন, ‘এটাই শেষ দফা।’ শেখ মুজিবুরের বাসভবন বাংলাদেশের পতাকা এবং বিভিন্ন প্রতীক দিয়ে সজ্জিত ছিল। এ কথার অর্থ কি তা জিজ্ঞেস করায় তিনি সেই স্লোগানটি দিয়ে তার জবাব দিলেন, যা তিনি হাজার-হাজার বার জনতার সামনে উচ্চারণ করেন ‘জয় স্বাধীন বাংলা, স্বাধীন বাংলা দীর্ঘজীবী হোক।’
১৯ মার্চ জয়দেবপুরের গুলিবর্ষণে আহতদের মধ্যে এদিন দু’জনের মৃত্যু হয়।
কোনো কোনো সাংবাদিক জানতে পারেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল হামিদ গোপনে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থান করছেন। এই প্রথমবারের মত তার পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানের ব্যাপারে গোপনীয়তা পালন করা হয়। জেনারেল হামিদ ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন করে বেড়াচ্ছিলেন। কয়েকদিন পরেই লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এই পরিদর্শনের কারণ বাঙালিরা জানতে পারে।