বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠক

আপডেট: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১: এই দিনে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সচিবালয় প্রাঙ্গণে সরকারি কর্মচারীদের সমাবেশে বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য। অথচ আজ জাতির পিতা, যিনি আমাদের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, সেই বঙ্গবন্ধুকে এখন পাকিস্তান সরকারের হেফাজতে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে আমরা তার মুক্তির জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধু তার সোনার বাংলার যে রূপরেখা ঠিক করে রেখেছেন, বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে, ঠিক সেইভাবে দেশকে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’

এ সময় তাজউদ্দীন আহমদ গণহত্যাকারীদের নিয়ে বলেন, ‘যারা স্বেচ্ছায় প্রত্যক্ষভাবে দখলদার বাহিনীকে গণহত্যা পরিচালনায় সহায়তা করেছে, তাদের কখনো ক্ষমা করা হবে না। যারা বিশেষ পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছে তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’

২৩ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক করা হয় বাংলাদেশের সরকারি ও রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সব পর্যায়ে বাংলা ভাষা প্রবর্তিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল:
১. সরকারি নির্দেশাবলী, বুলেটিন, গেজেট নোটিফিকেশন, সাইন বোর্ড, রাস্তার নামফলক, গাড়ির নম্বর বাধ্যতামূলকভাবে বাংলায় লিখতে হবে।
২. যেসব সরকারি সংস্থা ও সংগঠনের সাথে পাকিস্তান অথবা পূর্ব পাকিস্তান শব্দ যুক্ত ছিলো তার নাম বাংলাদেশ হবে।
৩. স্টেট ব্যাংকের নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ হবে।
৪. ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে হবে।
৫. কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পুনর্নির্মাণ করতে হবে।
৬. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে যেসব পরীক্ষা নেয়া হয়েছে তা বাতিল হবে এবং দ্রুত সংক্ষিপ্ত ও কন্ডেন্সড সিলেবাসে নতুন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
৭. মুক্তিযুদ্ধে শহিদ পরিবারের কল্যাণে একটি ওয়ার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হবে।
৮. ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ফাইন আর্টস এ্যান্ড লিটারেচার নামে একটি চিত্রশালা ও প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে।
৯. প্রেস ট্রাস্ট বিলুপ্ত করা হবে।

এক চিঠির সূত্র ধরে ভারতীয় বাহিনী মিরপুর পুলিশের সহযোগিতায় শিয়ালবাড়ি ও রূপনগরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের একটি ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়ে ইলেকট্রিক রাডার, ৪টি বিমানবিধ্বংসী কামান, ট্রান্সমিটার যন্ত্র, পূর্ণাঙ্গ টেলিফোন ইউনিট, ইলেকট্রিক জেনারেটর, পাওয়ার পাম্প, বিমানবাহিনীর মূল্যবান সরঞ্জাম, মেশিনগান, সদ্য আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ চিনা গোলাবারুদ-বিস্ফোরক দ্রব্য, সেনাবাহিনীর বহু নথি উদ্ধার করে।

এ দিন কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। এরপর তাকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর নবনিযুক্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার বিমানবাহিনীর সব সদস্যকে বিমান বাহিনীর সদর দপ্তরে রিপোর্ট করতে বলেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল পদে যোগ দেন উইং কমান্ডার এস আর মীর্জা, ডাক বিভাগের সহকারী (অতিরিক্ত) মহাপরিচালক এ.এম. আহসান উল্লাহ ডাক বিভাগের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি পরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২৩ ডিসেম্বর মিয়ানমারে পালানোর সময়ে মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীকে আটক করে মুক্তিবাহিনীর একটি দল। পরে চট্টগ্রামের নৌঘাঁটিতে তাকে আটকে রাখা হয়।
ঢাকার চিনা কনসুলেট বন্ধ করে দেয় চিনা সরকার। ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী ঢাকা দখল করার পর পাকিস্তানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে চিনা সরকার এই ব্যবস্থা নেয়।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে রাওয়ালপিন্ডিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো পাকিস্তান নৌবাহিনীর ছয় জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ