বুদ্ধিজীবী হত্যা-রহস্য উদ্ঘাটনে ৭ সদস্যের কমিটি

আপডেট: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ : এদিন এপিবি’র খবরে বলা হয়: ঢাকা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীদের এক সভায় ফ্যাসিস্ট আল-বদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের রহস্য উদ্ঘাটনের উদ্দেশ্যে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ‘বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি’- নামে অভিহিত হবে। কমিটির নেতৃত্ব করবেন প্রখ্যাত লেখক ও চিত্র পরিচালক জহির রায়হান। এক সরকারি হ্যান্ডআউটে বলা হয়, দখলদার বাহিনীর সহযোগিতাকারী আরও ১৮ জন চাঁইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তারা হল: ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক সৈয়দ জিল্লুর রহমান, পুলিশের সাবেক ডিআইজি মঈনুদ্দিন খান, তথাকথিত উপনির্বাচনের এমপিএ তেজগাঁও ঢাকার মো. জি এ খান, তথাকথিত উপনির্বাচনের এমএনএ জামাতে ইসলামের অধ্যপক এস এম ইউসুফ, গোপালগঞ্জের মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামানের ভ্রাতা ফায়েকুজ্জামান, জামালপুর মহকুমা কনভেনশন মুসলিম লীগের সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, ঢাকার শান্তিনগরের নুরুজ্জামান খান, ঢাকার মিরপুরের শাকিল আহমদ, সিভিল আর্মড ফোর্সের সদস্য আনিস খান, ঢাকার মিরপুরের আনোয়ারুল হক, কুমিল্লার মতলবের মওলানা সফিউল্লাহ, কুমিল্লার ফারদগঞ্জের শহিদুল্লাহ, ঢাকার মিরপুরের আব্দুল কাইয়ুম, অলাম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস্থ শরীফ খান, ঢাকার মিরপুরের মো. ইউসুফ, ঢাকার মিরপুরের রাজাকার মো. সিদ্দিক, ঢাকার মানিকগঞ্জের শান্তি কমিটির সদস্য একেএম সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকার খোদাদাদ ।

এপিবি’র খবরে প্রকাশ, খিলগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয় পুনরায় চালু উপলেক্ষ আয়োজিত বিরাট কর্মিসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, সর্বপ্রকার শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সমাজতন্ত্রী অর্থনীতি চালু করাই আওয়ামী সরকারের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতন্ত্রী দেশ হিসেবে পুনর্গঠনের জন্য সর্বশক্তি ও উদ্যম নিয়োজিত করার জন্য তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মুক্তি সংগ্রামে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শহিদদের রক্ত বৃথা যেতে দেবে না।

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলাদেশের মানুষ সত্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মাত্র নয় মাসের মধ্যে জয়ী হয়েছে। কোনো জাতি এত কম সময়ের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি এবং স্বাধীনতার জন্য এত রক্তের ঋণও পরিশোধ করতে হয়নি।

বাঙালিদের মুক্তি সংগ্রামে অকুন্ঠ সমর্থনদানের জন্য তিনি ভারতের ৫৫ কোটি অধিবাসী, ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের মহান জনগণ ও সরকারের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থনদানের ফলেই বাংলাদেশ বিশ্বযুদ্ধের শিকার হতে বেঁচে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ফলে চিরকালের জন্য পঙ্গু ও বেসামরিক লোকদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বাংলাদেশ সরকারের শান্তিপুর্ণ সহ-অবস্থান ও জোট নিরপেক্ষ নীতির পুনরুক্তি করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুব সমাজ স্বাধীনতার পুরোধা ছিল বলে তাঁদের নিরস্ত্র করা হবে না। তাঁরা নিজেদের পেশায় ফিরে যেতে না চাইলে তাঁদের জাতীয় মিলিশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভোরে ঢাকা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলম মোস্তফা এমপিএ এবং কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এএনএ বক্তৃতা করেন।

পিটিআই পরিবেশিত খবরে বলা হয়, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪৫ হাজার যুদ্ধবন্দিকে জাহাজযোগে ঢাকা থেকে ভারতে নেওয়া হবে। এই যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে নিয়মিত ও অনিয়মিত সৈন্য রয়েছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলী বেগম শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে নেতা ও কর্মীদের সাথে আলোচনা করেন। সন্ধ্যায় তিনি দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে গিয়ে দখলদার বাহিনী দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত মেশিনপত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ