২২ ডিসেম্বর ১৯৭১: রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সরকারের সাত সদস্য ঢাকা পৌঁছান

আপডেট: ডিসেম্বর ২২, ২০২৩, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


এ দিনে পাকিস্তানের সেনা ও নৌ এবং বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা বরখাস্ত হোন। এর মধ্যে চিফ-অব-স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান ও নিরাপত্তা সচিব মেজর জেনারেল আবু বকর ওসমান মিঠা, মেজর জেনারেল কায়ানি, মেজর জেনারেল খোদা বখশ ও এয়ার মার্শাল রহিমকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয়। এছাড়া পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো নৌবাহিনীর ছয় অফিসারকে বরখাস্ত করেন। বেসামরিক উপদেষ্টাদের মধ্যে বরখাস্ত হন এমএম আহমেদ, মোহাম্মদ শফিক ও গিয়াসউদ্দিন আহমেদ।

এদিন স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সরকারের সাত সদস্য ভারতীয় বিমানবাহিনীর ক্যারিবু পরিবহন বিমানে করে অস্থায়ী ঢাকা এসে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাদের বিপুলভাবে সংবর্ধিত করা হয়। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, শত্রুমুক্ত বাংলাদেশ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা ও তার আশু করণীয় নির্ধারণে ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ মন্ত্রিসভা সচিবদের সমন্বয়ে যে সাব-কমিটি গঠন করেছিল, সেই কমিটি ও পরিকল্পনা সেল পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্নভাবে এ যাবৎ কাজ করেছে। ফলে বেসামরিক প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবন, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন, খাদ্য ও জ্বালানিসহ জরুরি পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, সরবরাহকৃত অস্ত্রশস্ত্র পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া, পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র সমর্থকদের নিষ্ক্রিয়করণ, জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়োগ, সচিব সাব-কমিটি ও পরিকল্পনা সেলের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন, মন্ত্রিসভায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের পর জেলা পর্যায়ে জরুরি করণীয় ও দায়িত্ব সম্পর্কে জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশপত্র প্রেরন করা হয়।

বাংলাদেশে পাক হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যার জন্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যা ও অন্যান্য অভিযোগে যারা অভিযুক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন জেনারেল, একজন ব্রিগেডিয়ার, তিনজন কর্নেল, দুজন মেজর ও একজন ক্যাপ্টেন। এ-ছাড়া দ্বিতীয় আরেক তালিকায় ১২ অভিযুক্তের নাম রয়েছে। এ তালিকা প্রণয়ন তখনও চলছিল।

রাওয়ালপিন্ডিতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় যে, শেখ মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে। এদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো জানান, তিনি শিগগিরই চীন সফরে যাবেন।

২২ ডিসেম্বর গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া মুক্তি দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে এ দুই থানা হানাদারমুক্ত হয়। ১৬ ডিসেম্বর দেশের বিজয় ঘোষিত হলেও গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া পাক হানাদারমুক্ত হয়েছিল ২২ ডিসেম্বর। টানা ২৮ দিন মুক্তিবাহিনী ও মুজিববাহিনীর আক্রমণের পর গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পে অবস্থানরত শতাধিক পাকসেনা মিত্রবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে। আর এর মধ্য দিয়ে ওইদিন এ দুই থানা হানাদারমুক্ত হয়। তবে এর আগে আগৈলঝাড়ার ছয়টি ও গৌরনদীর চারটি বধ্যভূমিতে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে গণকবর দেয় পাকিস্তানি সেনারা।