‘বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সাহায্য করবে ভারত’

আপডেট: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: এদিন ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান ডিপি ধর বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে ভারত সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এ দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। দেশের স্বনামধন্য প্রকৌশলী, চিকিৎসক, লেখক, বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের হত্যা করেছে।’

মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ডিপি ধর বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধেই ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশে এসেছেন। তারা বাংলাদেশে কতদিন থাকবেন সেটা বাংলাদেশ সরকারই ঠিক করবেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত একদিনও ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশে থাকবে না।’

ঢাকায় এ দিন জাপানের প্রভাবশালী সংবাদপত্র আসাহি কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বিশ্বের সব দেশের সরকারের কাছে, বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি বাংলাদেশ সরকারের বাস্তবতা মেনে নিতে এবং স্বীকৃতি দিতে আবেদন জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি জাপানসহ বিশ্বের সব দেশের প্রতি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করতে আহ্বান জানাই। বাংলাদেশ এখন বাস্তব সত্য। আমাদের সরকারের কার্যক্রমও এখন দেশজুড়ে শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি অদূর ভবিষ্যতে আমরা উন্নত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবো। আমাদের জনগণের অসীম আত্মত্যাগই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।’
তাজউদ্দীন আহমদ আরও বলেন, ‘মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত ও অনিয়মিত সৈনিকদের পুনর্গঠন করে তাদের জাতীয় সামরিক বাহিনীতে পরিণত করা হবে।’

এ দিন বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমাদের দেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে সকল দেশের সঙ্গে সহাবস্থান। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সকল দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। কেউ আমাদের ওপর আক্রমণ করলে তবেই আমরা পাল্টা আক্রমণ করবো। আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে তখন আমরা পাল্টা আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করবো না। অন্যথায় আমাদের অবস্থান হবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক।’

বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরকারের বাণিজ্য দপ্তরকে মালিক ও কর্তৃপক্ষবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ফার্ম ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করেন।

বঙ্গভবনে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. এস চক্রবর্তী নেতৃত্বে ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের একটি দল সাক্ষাৎ করেন।
বাংলাদেশ সরকারের অর্থ, রাজস্ব ও বাণিজ্য মন্ত্রী এম. মনসুর আলী এক ঘোষণায় জানান, ‘বাংলা ১৩৭৯ সালের ১ বৈশাখ থেকে ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির ওপরে খাজনা মওকুফ হবে।’

এ দিন দুপুরে একটি ভারতীয় সামরিক উড়োজাহাজে ঢাকায় এসে পৌঁছান ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল শ্যাম মানেকশ। এ সময় বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আব্দুস সামাদ আজাদ। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর জেনারেল মানেকশর এটিই প্রথম ঢাকা সফর।
২৬ ডিসেম্বর সাবেক পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদের পরিচালক ড. এম কায়মুদ্দিন নিজ মাসিক বেতন ২ হাজার ৬০ থেকে কমিয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করেন। এ সময়ে ড. এম কায়মুদ্দিন তার বেতনের বাকি টাকা দেশের পুনর্গঠন ও উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে ব্যয় করার ঘোষণা দেয়।

২৬ ডিসেম্বর হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি কনফেডারেশন গঠনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে রাওয়ালপিন্ডি নেয়া হয়েছে। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য ভুট্টো চিনা ও মার্কিন প্রতিনিধিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’

হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২২টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ইউরোপের দেশ।’ তবে দেশগুলোর নাম এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

এ দিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত নিজ নিজ দেশের প্রতি আহ্বান জানান। ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে পাওয়া একটি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো ব্রিটেনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে। স্থানীয় প্রাক্তন কূটনীতিক মিশনের অফিসে এরই মধ্যে কিছু কাজ শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এই দেশগুলো এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি।

কাঠমুন্ডুতে পাকিস্তান দূতাবাসে নিযুক্ত প্রথম সচিব ও বাঙালি কূটনীতিবিদ এ.কে.এম. মুসলেহউদ্দিন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ