রাবি’র আবাসিক শিক্ষার্থীর সিট দখল করে অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে দেয়া ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ

আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ১১:২০ অপরাহ্ণ


রাবি প্রতিবেদক:


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীর সিট দখল করে অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে দেয়া ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সিট দখলের পর শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ডেকে নিয়ে ওই আবাসিক শিক্ষার্থীকে হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। পরে প্রাধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে সমাধান হয় বিষয়টির।

আবাসিক অভিযুক্তরা হলেন, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিনহাজ ইসলাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবিব ফিরোজ প্রমুখ। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে ভুক্তভোগী ইমরান ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এবং শহিদ হবিবুর রহমান হলের ১৪৬ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র।

ভুক্তভোগী ইমরান ইসলাম জানান, শুক্রবার দুপুরে সে হল প্রশাসনের বরাদ্দকৃত ১৪৬ নম্বর কক্ষে ওঠে। রাতে খাওয়ার জন্য বাইরে গেলে ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজের কয়েকজন নেতাকর্মী এসে তার বিছানাপত্র সিট থেকে সরিয়ে দেয়। সেখানে সমাজকর্ম বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মাহফুজুলকে তুলে দেয় তারা। হলে এসে এ অবস্থা দেখে প্রাধ্যক্ষ স্যারকে জানায় সে। তখন প্রাধ্যক্ষ তাকে বলেন, ‘তুমি ওদের জানাও প্রক্টর স্যারের সুপারিশে প্রাধ্যক্ষ এই সিট তোমাকে বরাদ্দ দিয়েছে। এই দুই দিন তো ছুটি। রোববার এসে এটা দেখবো। তুমি এখান থেকে বের হবা না।’

ইমরান আরো জানান, বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় এবং প্রাধ্যক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ওভাবেই রুমে থাকে সে। ১৯ এপ্রিল সকালে হলের ছাত্রলীগ নেতা আহসান হাবিব ফিরোজ তাকে তার কক্ষে ডাকেন এবং সিট ছাড়ার জন্য হুমকি দেন। ওইসময় ফিরোজ বলেন, ‘তোকে যদি সিটে ওঠতে না দেই, তাহলে প্রক্টর বা প্রাধ্যক্ষ আসবে? এখান থেকে যাওয়ার পর বিছানাপত্র নিয়ে চলে যাবি। তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজ ইসলাম বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী সিটেই থাকবে। ছাত্রলীগের কেউ যেন কোনো শিক্ষার্থীকে নিজের কক্ষে না ডাকে, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক করা হবে।
হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে আরেক অভিযুক্ত আহসান হাবিব ফিরোজ বলেন, ‘প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েই ওই সিটে আমি একজনকে উঠিয়েছি।’

তবে, আহসান হাবিব ফিরোজের দাবি মিথ্যা বলে জানান হল প্রাধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি কেনো আবাসিক শিক্ষার্থীর সিটে অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে থাকার অনুমতি দিবো? প্রয়োজন মনে হলে ওই অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে আবাসিকতায় দিয়ে দিতাম।
তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পরে দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি। ওই শিক্ষার্থী তার সিটেই থাকবে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে’।

আবাসিক ছাত্রকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিবেন জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি কথা বলেছি, আর সমস্যা হবে না। পরবর্তীতে যদি একই ঘটনা ঘটায়, তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজের বিরুদ্ধে হলে সিট দখল, আবাসিক ছাত্রকে হুমকি-ধামকি দেয়া, চাঁদাবাজি ও ডাইনিং-ক্যান্টিনে খেয়ে টাকা পরিশোধ না করার অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে হলগুলোতে ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে কার্যকরি পদক্ষেপের অভাবেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে দাবি ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদি সজিব বলেন, ‘হলে ছাত্রলীগের সিট দখল নতুন কিছু নয়। এমন ঘটনা ঘটিয়ে ক্ষমতা নামক বটবৃক্ষের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে অভিযুক্তরা। একটি ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয়ার মানে এমন অসংখ্য ঘটনার জন্ম নিতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করা। তাই অবিলম্বে এদের লাগাম টেনে ধরে হলে যথাযথভাবে সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে।’

বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার আলিফ বলেন, ‘হলগুলোতে প্রতিনিয়ত ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ও নির্যাতনের ঘটনায় হল প্রশাসনের নিরব ভূমিকা ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করার বিষয়টি প্রকাশ পায়। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়মানুযায়ী সেশন টু সেশন আবাসিকতা দেবার নিয়ম থাকলেও হল প্রশাসন নিয়মিত আবাসিকতা দিতে আগ্রহী নয়। এ থেকে স্পষ্ট হয়, হল প্রশাসন নিয়মিত আবাসিকতা দিয়ে বৈধ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের হলে উঠাতে আগ্রহী নয়।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘বিষয়গুলো আমরাও দেখছি। একটি কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’