সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪, ১১:০৬ অপরাহ্ণ


এমরান আলী রানা, সিংড়া (নাটোর):চলনবিলের নীল আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে হলুদ সরিষার ফুল। সকালে সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষা ফুলের সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ফুটে আছে হলুদ সরিষার ফুল। শীতের হাওয়ায় ফুলের সুভাস মোহিত করছে চারপাশ। চারদিকে সরিষা ফুলের সমারোহে মাঠে ছড়াচ্ছে নান্দনিক সৌন্দর্য, আর সরিষা ফুলকে ঘিরে মধু আহরণে ফুলে ফুলে বসছে মৌমাছি। পড়ন্ত বিকালের মিষ্টি রোদে সরিষা ফুলগুলো বাতাসে দোল খেতে থাকে। ফুলগুলো তাদের কলি ভেদ করে সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। এ যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম ঘুরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষের এরকম দৃশ্য দেখা যায়।

চলতি বছরে এ উপজেলায় ৬ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর, তবে আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৬২০ হেক্টর। সরকারি প্রণোদনা পাওয়া ও আবাদে খরচ কম হওয়ায় সরিষা আবাদে ঝুঁকছে কৃষকরা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ মৌসুমে এ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৫ হাজার ৫৩০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ১ কেজি করে বীজ এবং ২০ কেজি করে সার বিতরণ করা হয়েছে। সরিষা ৮০-১০০ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। আশা করা যায় এবার সরিষার ভালো ফলন হবে। এবার দাম ভালো পেলে আগামীতে কৃষকেরা সরিষা চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠে এখন শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সমারোহ। স্বল্প খরচ আর কম সময়ে সরিষা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নাটোরের সিংড়া উপজেলায়।

উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে সরিষা চাষ। ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করেছেন। এরপর আবার ধান রোপণ করবেন কৃষকেরা। তাতে করে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। চলতি বছরে উপজেলা সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সিংড়া পৌরসভার চকসিংড়া মহল্লার সরিষা চাষি আবদুস সোবাহান বলেন, নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি বছর ১ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করি। আশা করছি অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে। সরিষা আবাদে খরচ অনেক কম।

শোলাকুড়ার রিপন আলী জানান, সরিষা আবাদে খরচ কম, পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া কম সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। এ অঞ্চলে সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছে।
শেরকোল ইউনিয়নের কামরুল ইসলাম নামের একজন চাষি বলেন, ফলন ভালো হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে সরিষা ঘরে তুলতে পারবো। আগামী বছর সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা এ সরিষা চাষির।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ বলেন, চলনবিল খাদ্য ও শষ্যের ভান্ডার। এ অঞ্চলে সকল প্রকার ফসল আবাদ করা হয়। সরিষা আবাদে খরচ কম হওয়ায় ও সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় সরিষা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি হয়েছে। আমরা সবসময় কৃষকদের প্রণোদনা ও পরামর্শ দিয়ে পাশে রয়েছি।