আবারও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড

আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

দুদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রতিশ্রুতি রক্ষা হচ্ছে না

চলতি বছরের ২৫ ও ২৬ মার্চ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে দুই বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছে। ২৫ মার্চ লালমনিরহাটে কিছু বাংলাদেশি কাঁটাতারের বেড়া কেটে ওপারে যায়। বিএসএফের ভাষ্য হচ্ছে, তারা যখন চ্যালেঞ্জ করে তখন তারা (অনুপ্রবেশকারীরা) সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল এবং তারা বিএসএফকে ঘেরাও করে। তখন বিএসএফ গুলি ছোড়ে এবং দুই জন আহত হয়।

আহত এক বাংলাদেশি এপাশে চলে আসে। আরেকজনকে ওপারে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। অন্য আরেকটি ঘটনায় নওগাঁ সীমান্তে ২৬ মার্চ একই ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে একই ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না।

আমরা চাই সীমান্তে এ ধরনের কোনও ঘটনা যেন না ঘটে। সরকারের পক্ষ থেকে বিজিবির মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে ও সীমান্ত বৈঠক করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিবির পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে ও সীমান্ত বৈঠক হয়। ভারতের সাথে আমরা অনেক-দিন ধরে আলাপ-আলোচনা করছি।

আমি যখন সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলাম তখনও গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি, যাতে সীমান্তে নন-লিথাল (প্রাণঘাতী নয় এমন) অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সে কারণে রাবার বুলেট বা ছররা-গুলিতে অনেকে আহত হোন ও বাংলাদেশে পাড়ি দেন তারা।’

এর আগে ঢাকার পিলখানায় ‘বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলনে’ বলা হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গুলিতে যেন আর কেউ মারা না যান, সে বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে দুদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। বিএসএফের মহাপরিচালক সীমান্তে হত্যা ‘শূন্যে’ নামিয়ে আনতে নিজেদের অস্ত্রনীতি পরিবর্তনের কথা বলেছেন।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেছেন, সীমান্তে প্রাণসংহারী অস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নীতিতে এসেছি। এ নীতির কার্যকর সুফল পেতে সীমান্তে যৌথ টহল বাড়ানো, তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয়পক্ষই। সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রাণসংহারী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের কথা অতীতেও অনেক হয়েছে। বিএসএফ ‘নন-লেথাল’ নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

বাস্তবে দেখা গেছে, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক মারা গেছেন। বিজিবির সদস্যও বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে বিজিবি সদস্য রইশুদ্দিন মারা যান। বিএসএফের মহাপরিচালক অবশ্য দাবি করেছেন যে, সীমান্তে তাদের অনেক সদস্যও আহত হয়েছেন।

তার ভাষ্য, ‘অনেক সময় চোরাচালানকারী ও অপরাধীরা দা ও ধারালো চাকুর আঘাতে বিএসএফ সদস্যদের আহত করে। তখন আত্মরক্ষার জন্য বিএসএফ সদস্যরা গুলি ছোড়েন।’ তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সময়ে যেসব প্রতিবেদন দিয়েছে তা থেকে আমরা জানতে পারি যে, বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে নিরস্ত্র মানুষ মারা যান।

এমনও অভিযোগ আছে যে, বিএসএফের হাতে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা নির্যাতনের শিকার হন। আমরা বলতে চাই, সীমান্ত হত্যা বন্ধে শুধু প্রতিশ্রুতি দেয়ার মধ্যে আটকে থাকলে চলবে না। এর বাস্তবায়ন করতে হবে। বিজিবি-বিএসএফ আন্তরিকভাবে চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা কঠিন কোন কাজ হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। তাই এই বিষয়টি নিয়ে আরও গুরুত্বসহকারে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।