সেনানিবাস ছাড়া পাকিস্তান সরকারের প্রভূত্ব আর কোথাও রইল না

আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:১৩ মার্চ, ১৯৭১ : সেনানিবাস ছাড়া পাকিস্তান সরকারের প্রভূত্ব আর কোথাও রইল না। তাদের সেই প্রভূত্বের অবশেষ ঢাকা সেনানিবাস থেকে ১২৫ নম্বর সামরিক আইন আদেশটি এ রকম “যে সব বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয়, তারা যদি ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে কাজে যোগদানে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের চাকরি যাবে এবং তারা ফেরার বলে গণ্য হবে। তাদের ২৫ নম্বর সামরিক আদালতে বিচার করে ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া যেতে পারে।

স্বৈরাচারের রক্ত চক্ষুকে বাঙালি জাতি কবে, কোন কালে সমীহ করেছে? সে ইতিহাস বাঙালির নেই। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো। ওই আদেশ মানুষের হাসি আর ঘৃণার খোরাক হয়েই রইল।
জারিকৃত সামরিক বিধির কঠোর সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এ আদেশ জারি উস্কানিমূলক কাজ।’ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আদেশজারিকারীদের বাস্তব অবস্থাটা বোঝা উচিৎ যে, এই
প্রকারের হুমকি সত্ত্বেও তাদের নিকট নতি স্বীকার না করার দৃঢ় সংকল্পে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ।’

বঙ্গবন্ধু এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘হুমকির মুখেও জনগণ তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। কারণ তারা জানে যে, কোনো শক্তিই জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে বাধা দিতে পারে না।’
এদিন ভৈরবে এক বিরাট জনসভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, ‘ভুট্টো ও তার দলের উচিৎ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবো। বাঙালিরা আর অবাঙালিদের দ্বারা শাসিত হতে চায় না।’

ওদিকে স্বৈরাচারী ইয়াহিয়া বাঙালির ওপর তার দমন-পীড়ন যতই বাড়াক না কেন গণপ্রতিরোধ আরো মজবুত, আরো জোরদার হয়ে উঠলো। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে সমগ্র বাঙালি জাতি আজ বিক্ষুব্ধ। স্বাধীনতার দুর্জয় আকাক্সক্ষা তাদের টেনে নিয়ে চলে চূড়ান্ত জনযুদ্ধের দিকে। জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সমগ্র জাতি আজ সশস্ত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে লাঠি হাতে মোকাবিলা করার এক অভূতপূর্ব সংগ্রামে সামিল। এমন জীবনঘনিষ্ঠ প্রণোদনা বিশ্ব ইতিহাসের কোথায়, কবে সংঘটিত হয়েছে?

ন্যাপের (রিকুইজিশনপন্থী) সভাপতি আব্দুল ওয়ালী খান এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাতের জন্য ঢাকায় পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের শেখ মুজিবের সাথে তিনি সম্পূর্ণ একমত। তার সঙ্গে ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তান ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক গউস বক্স বেজেঞ্জো। এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলনের ফল পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প উৎপাদন শতকরা ৬০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।