বিজয় দিবস উদ্যাপনের তাৎপর্য

আপডেট: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

গোলাম কবির

বিজয় দিবস উদ্যাপন অর্ধশতাব্দীকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। মহা-উৎসবে প্রাণের উদ্দীপনায় আমরা তা পালন করেছি। আমাদের চোখের সামনে সুখের নীড়ের মত মাঠভরা সরষে ফুলের সৌন্দর্য-সৌরভ আবেশ ছড়িয়েছে। সেদিন ভিনদেশি প্রেমিকরা গুটিয়ে ছিলো। মাত্র কিছু দিনের মধ্যে এক উচ্চাভিলাষী সৈনিকের প্ররোচনায় সব নস্যাৎ হয়ে গেল। এযেন ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়ার মত। না আমরা উড়ে যাইনি। অকস্মাৎ ঘটনার বিহ্বলতায় বিমূঢ় হয়ে গেছিলাম। অধিকার হরণকারিরা ভেল্কিবাজী দেখিয়ে কৌশলে আমাদের পাকিস্তানে নিয়ে যেতে চেয়েছে। আমাদের বিজয় দিবসগুলো গোঁজামিল দিয়ে সময় আর অর্থের অপচয় ঘটিয়েছে।

বাংলার মানুষের চেতনার শেকড়ের সন্ধান আমরা পেয়েছি গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে। তা রূপ নিতে সময় লেগেছে সিকি শতাব্দী। বাংলার মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাক্সক্ষা রূপায়িত হবার পরিবেশ সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। আমরা ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতিতে আমাদের শ্যামল সংস্কৃতিকে ধূসর বালুকাস্তূপে ঢাকার জন্য উদবাহু থেকেছি। থেকেছি একেবারে প্রাণের সম্পদ ভেবে, তাই মানুষে মানুষে ঈর্ষার দহন। এই ঈর্ষা কাতরতা থেকে বের হবার সাধনাই হলো মুক্ত চিন্তা। একেই বোধকরি বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’। ৭ই মার্চের জনসভার ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এর সাথে মুক্তির সংগ্রাম যুক্ত করার তাৎপর্য ছিলো সেখানেই।

‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ জীবনদানকারী অকুণ্ঠ নর-নারীর জীবনতৃষ্ণা প্রোজ্জ্বলনের আশা নিয়ে আমরা ১৬ই ডিসেম্বর উদ্যাপন করি। এই উদ্যাপিত দিবসটি আমাদের অস্তিত্বের নিগূঢ় প্রহরী। বাইরের চাকচিক্য বৃদ্ধি পেলেও অন্তরের ঐশ্বর্যে ঝামা গড়ে গেছে। মুক্তির আশা যেন সেখানে নির্বাপিত। এ অবস্থা বেশিদিন চললে বিজয় দিবসের তাৎপর্য স্তিমিত হয়ে যাবে। না তা হতে দেয়া যায় না। ধর্ম কিংবা মতবাদ বাদ দিয়ে জীবনবাদকে দিতে হবে প্রাধান্য।

প্রশাসন-শিক্ষা-রাজনীতিজীবী কিছু মানুষের প্রাধান্যে আমরা অনুষ্ঠানকে ভারাক্রান্ত করি, ভেতরে প্রবেশ করি কম। ফলে বিজয় দিবস কোন তাৎপর্যহীন অনুষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে। এখান থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। বেরিয়ে আসবো তখনই যখন সবকিছু থেকে বেরিয়ে এসে নিছক জীবনকে সুন্দর সুশৃংখল করার পথে নিজের স্বার্থ পরিত্যাগ করতে পারবো। রবীন্দ্রনাথ স্বার্থান্ধ মানুষকে সকল উন্নয়নের প্রতিবন্ধক মনে করেছেন ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘পথের সঞ্চয় গ্রন্থে।

অতশত গ্রন্থপাঠে আমাদের চোখ খুলবে না। “অসীম কালের যে হিল্লোলে জোয়ার ভাটায় ভুবন দোলে” যেখানে ‘ছড়িয়ে আছে আনন্দের’ গান তা’কুড়িয়ে নিয়ে সবার মাঝে বিতরণ করতে পারলেই বিজয়ের আনন্দপূর্ণ হবে। নাকি আড়ম্বরেই থেকে যাবে!

অর্ধশতাব্দীকাল আমরা হেলায় হারিয়েছি তা নয়, বঞ্চনার মাঝে প্রাপ্তির আশা জাগ্রত হয়েছে পরিবেশ জাগ্রত করতে পারিনি। এবার মলিনতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সচেতনভাবে জেগে উঠতে হবে। সবাইকে সাথে নিয়ে জীবন পণ সংগ্রামে জয়ী হতেই হবে, তা হলে অর্ধশতাব্দীর বিফল ভাবনা সফল হবেইÑ লোভীদের শ্যেন দৃষ্টি থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে পারবো। গণতন্ত্রওয়ালারা মূর্খকে জাতির শীর্ষে স্থান দিয়ে জাতিকে এরা কোন তিমিরে নিয়ে যাবে সে ভাবনা যেন আমাদের সদাজাগ্রত রাখে। সাথে শ্যামলাঙ্গী মাতৃভূমি আমাদের জীবনের সাধ পূর্ণ করে।

লেখক: সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ