সাপাহারে আমের বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে নিবিড় পরিচর্যায় আমচাষিরা।

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, ২:২৩ অপরাহ্ণ


সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি :নওগাঁর সাপাহার উপজেলা বর্তমানে দেশের সর্বত্রই আম উৎপাদনে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছে। বিগত বছরগুলোতে এই উপজেলার আম বিদেশেও রপ্তানি করা হয়েছে। প্রতি বছর এই উপজেলায় হাজার কোটির অধিক টাকার আম বাণিজ্য হয় বলে কৃষিদপ্তর ও আমব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

উপজেলার বিভিন্ন বাগানে নানা জাতের আমের উৎপাদন হয়ে থাকে । চলতি মৌসুমে কিছু কিছু আমবাগানে দেখা দিয়েছে মুকুল। বর্তমানে আম এখানকার প্রধান অর্থকরি ফসল হওয়ায় চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মুকুল পূর্ব পরিচর্যার কাজে। আমের বাম্পার ফলনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিচর্যা চলছে বাগানে বাগানে।

উপজেলার মানিকুড়া, ওড়নপুর, মসজিদপাড়া, পিছলডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার বাগানে মুকুল চোখে পড়ছে। কৃষকরা সতর্কতার সঙ্গে আমগাছের পরিচর্যায় এখন বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

অভিজ্ঞ আমচাষী এনামুল, দেলোয়ার হোসেন, মমিনুল হকসহ অন্য আমচাষীরা জানান, গত বছরের ঠিক এমন সময়ে আমের পরিপূর্ণ মুকুল দেখা গেলেও এবার শীতের তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব¡ বেশি হওয়ায় গাছে মুকুল আসতে বিলম্ব হচ্ছে। শীত প্রায় শেষের দিকে। একটু একটু করে গরম আবহায়া বইতে শুরু করেছে। কিছুদিন বাদেই পুরোপুরি সব বাগানের গাছে গাছে মুকুল পরিস্ফুটিত হবে বলেও মনে করেন তারা। এখন ফাল্গুন মাস। আর এই মাসের মধ্যেই সব গাছেই মুকুল ফুটবে বলেও আশা করছেন তারা।

উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান টকি জানান, এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত আমবাগানে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ গাছে মুকুল দেখা গেছে। মুকুল দেরিতে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এবারে শীতের তিব্রতা ও স্থায়িত্ব বেশি এবং গত বছর এখানে আমের হারভেস্টিংও দেরিতে শেষ হওয়ায় মুকুলও আসতে সময় লাগছে; তবে এক সপ্তাহের মধ্যে গাছে গাছে পরিপূর্ণ মুকুল দেখা যাবে বলে তিনি ধারণা করছেন।

আমচাষিরা অনেক আগে থেকে গাছের পরিচর্যা শুরু করেছেন। গাছে কীটনাশক, সার সহ পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে সময় মতো। এছাড়াও শতভাগ আম এবং বাম্পার ফলন ঘটাতে উপজেলা কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে আমচাষীদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে চলেছেন বলেও তিনি দাবী করেন তিনি।

এই কর্মকর্তা জানান, গত বছর এই উপজেলায় ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টোর জমিতে আমচাষ হয়েছিল এবার নতুন কিছু বাগান তৈরি হয়ে ৯ হাজার ২৭০ হেক্টোরে পৌঁছেছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারে শুধু সাপাহারই কমপক্ষে ১ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্টিকটন আম উৎপাদন হতে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে।

অধিক ফলনের লক্ষ্যে আমগাছে উকুন নাশক এভোমেট্রিন ও ছত্রাকনাশক মেনকোজেভ বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি বছরেও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আম রপ্তানি করা যাবে বলে কৃষি বিভাগ ও সংশি¬ষ্ট আমচাষীরা ধারণা করছেন।
এছাড়া সম্প্রতি আম কেন্দ্রিক সাপাহারকে লক্ষ করে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্যাহ আলমামুন উপজেলা পরিষদ চত্বরের মেইন গেট এর সাথে একটি আমচত্বর এবং সাপাহার আমের বাণিজ্যিক রাজধানী ব্রান্ডিং সংবলিত লিখনি প্রকাশ করে গেছেন।

আমচাষি মাসুদ রানা জানান, গত বছর গাছে মুকুল এলেও তা ধরে রাখতে পারে নি। তাই এবার আগে থেকে গাছের গোড়ায় সার, গাছে ভিটামিন, পানি সেচ দিয়ে পরিচর্যা করে যাচ্ছি, যাতে করে আম আসার সময় মুকুলের গোড়া শক্ত হয়। এবার আশা করছি, আবাহাওয়া ভালো থাকলে আমবাগানের গাছে গাছে পরিপূর্ণ মুকুল দেখা যাবে এবং অনেক আম আসবে ইনশাআল্লাহ।