রাণীনগরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথী ফসলের চাষ, বাড়ছে উৎপাদন

আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩, ৮:৫৮ অপরাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ:


নওগাঁর রাণীনগরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথী ফসলের চাষ। একই জমিতে একই সঙ্গে একাধিক মৌসুম ভিত্তিক ফসল চাষ করে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি ভাবে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর সেগুলো চালান করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একটি ফসল চাষ করার পর জমি ফেলে না রেখে সমসাময়িক একটি ফসলের সঙ্গে একাধিক ফসল চাষের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে উপজেলার কৃষকদের মাঝে। এছাড়া উপজেলায় সাথী ফসল হিসেবে আলুর জমিতে আখের চাষ এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আলুর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষও চোখে পড়ার মতো।

সমবায় ভিত্তিক সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট একই জমিতে একই সঙ্গে একাধিক ফসল চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে বিদেশী সবজি ও ফল চাষে তাক লাগিয়েছে। বর্তমানে রাণীনগর উপজেলাসহ তার আশেপাশের কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ব্যবহার করে একই জমিতে একই সঙ্গে একাধিক ফসল যে চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব এমন দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছে সুফলা নওগাঁ। ব্যানানা ম্যাংগো জাতের আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে শীতের মৌসুম ভিত্তিক বাধা কপি, ফুল কপি, লাল শাক, সবুজ শাক, ধনিয়া, রাধনী, মুলা, বিদেশী সবজি ব্রোকলি, রেডক্যাবেজ, বিটরুট, ক্যাসিক্যামসহ বিভিন্ন সবজি চাষে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। সঠিক কৃষি পরিকল্পনা, পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতায় একই জমিতে একই সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে এমন সবজির চাষে ফসলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে জানান সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্টের পরিচালক হাবিব রতন।

তিনি আরো বলেন উপজেলায় এই প্রথম বিদেশী সবজির চাষ করে সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট সমৃদ্ধির নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এইসব উচ্চমূল্যের বিদেশী সবজি চাষ কৃষকদের আগামীতে বিদেশী সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করবে এবং প্রান্তিক কৃষকরা সবজি চাষে বেশি লাভবান হতে পারবেন। পুরাতন কৃষির ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকদের আধুনিক কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে এবং এই অঞ্চলের বেকার যুবকদের লাভজনক আধুনিক কৃষির সঙ্গে যুক্ত করতেই মূলত তাদের এই প্রজেক্টের অবতারনা করা। দিন যতই যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণ ততই আশঙ্কাজনক হারে কমছে।

তাই চাষযোগ্য জমি ফেলে না রেখে এবং কম জমিতেও যে একই সময়ে একই সঙ্গে একাধিক উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল ও সবজি চাষ করা সম্ভব সেই বার্তাটি আমরা এই অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে পৌচ্ছে দিতে চেস্টা চালিয়ে আসছি। আমরা এই অঞ্চলে চাষ করা সম্ভব এমন সব উচ্চ ফলনশীল জাতের দামী ফল ও সবজি চাষের বিস্তার করতে আমাদের প্রজেক্টে সব সময় নিত্য নতুন লাভজনক ও অধিক ফলনশীল ফসলের চাষ করে আসছি। পরবর্তিতে আমরা সেই সব ফল ও অন্যান্য ফসলের চারা কম মূল্যে আগ্রহী কৃষকদের সরবরাহ করায় অনেক নতুন কৃষি উদ্যাক্তারা সেই সকল লাভজনক ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের। এটাই আমাদের প্রজেক্টের সার্থকতা। এছাড়া অধিক সবজি ও ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে চালানের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষকরা।

উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বাতেন বলেছেন, সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্টের দেখে আমিও কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে চলতি বছর একই জমিতে একই সাথে শীতের একাধিক সবজি চাষ করেছি। ফলনও অনেক ভালো পাচ্ছি। নিজেদের চাহিদা পূরণের পর সেই সবজি বাজারে বিক্রি করেও ভালো দাম পাচ্ছি। আগামীতে জমি ফেলে না রেখে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে সাথী ফসলের চাষ করবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক কোন কৃষক যেন ১টি আবাদের পর তাদের একখন্ড জমিও ফেলে না রাখে সেই মোতাবেক আমরা এই অঞ্চলের আগ্রহী কৃষকদের সাথী ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। বর্তমানে উপজেলার ১৫হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির সাথী ফসলের চাষ হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় কৃষকদের সাথী ফসল চাষ করাতে বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারাও সব সময় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করাসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। ফলন ও বাজারে দাম ভালো পাওয়ার কারণে আগামীতে সাথী ফসলের চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি শতভাগ আশাবাদি।