কর্মব্যস্ত নারীর নিজের দেখাশোনা

আপডেট: মার্চ ৮, ২০২৪, ১০:৫৮ অপরাহ্ণ

আখতার বানু বীণা
বিশাল পৃথিবীতে শতভাগ মানুষের প্রায় অর্ধেক নারী। আদিযুগ থেকে বর্তমান শিল্প সাহিত্য, সভ্যতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে কম নয়। নারী প্রেরণার উৎস, শান্তির প্রতীক, গর্ভধারিণী, মাতৃভাষার আধার, সৌন্দর্য্যের প্রতীক। নারী কখনও কন্যা, কখনও বোন, কখনও বউ. কখনও মা। একটি সময় ছিল যখন নারীদের ভাগ্য পুরুষের ওপর নির্ভরশীল ছিল, স্বতন্ত্র সত্তা ছিল না।

সুখের বিষয় নারী আজ নিজ গুনে অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন থেকে বেরিয়ে আলোকিত জগতের প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে, সংসারে, গৃহস্থালি কাজে, বসতবাড়ির কাজে, অফিস আদালতসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করছে। নারী স্বাবলম্বী হয়েছে। তাই তাদের বেড়েছে দারুণভাবে কর্মব্যস্ততা। কারণ প্রাচীন প্রথা অনুসারে সংসারের দায়িত্ব পালনের পর, তারা অফিস- আদালতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে। ফলে বেশিরভাগ নারীই শারীরিক ও মানসিক দিকের প্রতি নজর দিতে পারছেন না।

নিজের প্রতি এই অবহেলা নিজেকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ফেলছে। প্রায় সময়ই আমরা অনুভব করি কাজের দক্ষতা ও সফলতা আনতে সুস্থ থাকা প্রয়োজন কিন্তু সামর্থ্যরে বাইরে কাজ করে আমরা হাঁপিয়ে উঠি- অসুস্থ হয়ে পড়ি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানান জটিল রোগে জড়িয়ে পড়ছি।

তাই সকল কাজের মধ্যে মনে রাখতে হবে- মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ নিজ জীবন, শরীর ও সুস্থতা। এসবের জন্য নিজেকেই নিজের প্রতি যতœশীল হতে হয়। যার জন্য প্রয়োজন নিয়মানুযায়ী খাওয়া দাওয়া করা, ঘুমানো, ঘুম থেকে ওঠা, ব্যায়াম, রূপচর্চা করা, গোসল করা, মানসিক চাপ কমানো এবং বিনোদনের ব্যবস্থা থাকা। পারিবারিক কাজের চাপ কমানোর জন্য একজন কর্মব্যস্ত নারী যা করতে পারেন তা হলো-

  •  ঘরের কাজে স্বামীর সাহায্য পাওয়া গেলে তা মনমত না হলেও বিরক্ত না হয়ে কাজটা শিখিয়ে দিন, প্রশংসা করুন তাহলে পরে সহযোগিতা পাবেন।
  • পড়ার টেবিল, বিছানা, ঘর গোছানোর দায়িত্ব সন্তানকে দিন।
  • পরিবারের সদস্যদের প্রতিদিনের কাপড় চোপড় তুলে ভাজঁ করে যথা জায়গায় রাখতে শেখান।
  • প্রয়োজনীয় বিল কাগজপত্র হাতের নাগালে রাখুন, সহজে পাওয়া যাবে।
  • বাড়ির সদস্যদের প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর গুলো শিখিয় দিন।
  • ছেলেমেয়ে ছোট থাকলে যার কাছে এই শিশুকে রাখবেন তার প্রতি আপনার আস্থা নিশ্চিত করুন।
  • অফিসের ব্যাগ রাতে গুছিয়ে রাখুন।
  • নোটবুক লিখুন সেই অনুযায়ি আগে পরে কাজ করুন।
    অফিস আদালতে যারা কাজ করেন তারা মনে রাখবেন অফিস আর বাড়ি যেন এক হয়ে না যায়। অফিসের কাজ বাড়িতে না আনা ভালো। প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন করুন।
    কর্মব্যস্ত নারীর সুস্থ থেকে সফলভাবে কাজ করার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা উচিত। গবেষকদের মতে সকালে ঘুম থেকে উঠে-
  • কয়েকদানা কালোজিরা খাবেন, পাশাপাশি সামান্য মধু মিশিয়ে উষ্ণ লেবুর রসের শরবত।
  • কাজের চাপে সকালে নাস্তার সুযোগ কম থাকে, তবুও সেটাকে নিশ্চিত করতে হবে। কারণ রাতে আট- দশ ঘন্টা শরীর খাবার থেকে বঞ্চিত থাকে। অনেককেই অফিসে এসে বলতে শোনা যায় তাড়াহুড়ো করে নাস্তা খাওয়া হয়নি।
  • সকালে ডাল রুটি, সবজি ডিম অথবা সবজি খিচুড়ি খেতে পারেন।
  • কৃত্রিম চিনি না খেয়ে ফলের জুস পান করলে হজম ভালো হয়, বিভিন্ন ইনফেকশন ও স্বাস্থ্যগত সমস্য দূর হয়।
  • দুপুরের খাবার পরিমিত খাবেন। সালাদ, রুটি, বা অল্প ভাত, সবজি, মাছ হতে পারে।
  • গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে – খেজুর, কাজু বাদাম, কাঁঠালের বীজ খেতে পারেন।
  • কিছু সময় পরপর দিনে কমপক্ষে সাত/ আট গ্লাস পানি খাবেন।
  • প্রতিদিন মাছসহ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাবেন।
  • রাতের খাবার হালকা খেতে হবে। সব্জী, মুরগির মাংস বা ছোট মাছ দিয়ে রুটি সাথে স্যুপ বা সালাদ রাখতে পারেন।
  • মাতৃত্বজনিত কারণে পঁয়ত্রিশ বছর পরেই মেয়েদের ক্যালসিয়াম ঘাটতি দেখা যায়। তাই স্বামী সন্তানের পাশাপাশি প্রতিদিন ডিম, এক গ্লাস দুধ খাবেন।
  • কর্মব্যস্ততার মধ্যে চা, কফি আপনাকে চাঙ্গা রাখবে তবে খালি পেটে খাবেন না।
  • অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন গ্রহন করা উচিত না।
  • রাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুমিয়ে পড়বেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠবেন।
  • শরীর সুস্থ রাখতে সুতি, ঢিলাঢালা, আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে।

শারীরিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে রূপচর্চা করতে হবে। প্রতিদিন হাটাসহ আধাঘণ্টা ব্যায়াম করবেন। কাজের মাঝে দুই আড়াই ঘন্টা পর পাঁচ থেকে দশ মিনিট হাটাহাটি/বিশ্রাম করবেন। কর্মস্থলে ডেস্কে বসার জায়গাটি আরামদায়ক কিনা দেখে নিবেন। যাদের প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয় তারা ওষুধ ডাইনিং টেবিলে রাখুন, কিছু ওষুধ ভ্যানিটি ব্যাগে রাখুন এবং খেতে ভুলবেন না। মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সব ওষুধ কিনে নেবেন যেন হঠাৎ ফুরিয়ে গিয়ে বিড়ম্বনায় না পড়েন।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা, কোনো ধরনের অসুখকে শরীরে পুষে রাখবেন না তা যত ছোট হোক না কেন। কারণ তা ভবিষ্যতে জটিল আকার ধারণ করে। কর্মব্যস্ততার মাঝেও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখবেন যাতে আপনি মানসিকভাবে ভালো থাকেনÑধর্মীয় অনুভূতিসহ, বই পড়া, গান শোনা, গান গাওয়া, মেডিটেশান, ভ্রমণ এসবের সাথে থাকবেন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মাদার বখশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ