নওগাঁয় বাঁধ ও জমির ‘টপ সয়েল’ ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে

আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিন

নওগাঁর বদলগাছীর কসবা এলাকায় ফসলি জমির ‘টপ সয়েল’ কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। একশ্রেণির প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী এ কাজে যুক্ত। এছাড়াও নওগাঁর রাণীনগরে নদীর তীর রক্ষাকারী বাঁধের মাটি যাচ্ছে ইট ভাটার পেটে। বিভিন্ন স্থান পূরণেও বিক্রি হচ্ছে এই মাটি। এমন বিষয়টি নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানালেও মাসাধিক সময় পার হলেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় চলমান রয়েছে বাঁধের মাটি লোপাট। যার কারণে ভবিষ্যতে বাঁধের স্থায়ীত্বের বিষয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। এনিয়ে সোনার দেশ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের ২নং স্লুইস গেইট সংলগ্ন স্থানে পাহাড় সমান বাঁধের তীর ও তীরে থাকা বাঁধ রক্ষাকারী বড় বড় গাছ কেটে নিচের খাস জমিতে পুকুর খননের মাটি বহনের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। উপজেলার কুজাইল এলাকার সর্বরামপুর গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ছত্রছাঁয়ায় বাঁধ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখে কৌশল পালটিয়ে রাতে মাটি কাটছেন। বাঁধ সংলগ্ন জমি অনেক গভীর করার কারণে বর্ষা মৌসুমে বাঁধের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া এক সময় বাঁধের নিচে সুরঙ্গের সৃষ্টির মাধ্যমে বাঁধ ভেঙে বড় ধরণের বন্যা সৃষ্টির আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা। কখনোও বাঁধ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হলে বাঁধের উত্তর দিকে থাকা বিভিন্ন বিল ও মাঠের হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে এবং পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি গ্রামের পর গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ার আশঙ্কা করছে বাঁধের তীরবর্তি গ্রাম-গুলোর বাসিন্দারা।

অন্যদিকে নওগাঁর বদলগাছীর কসবা এলাকায় ফসলিজমির উপরিভাগের ১০ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান রয়েছে। তাই জমির উপরিভাগের সেই মাটি মাটি কাটা হলে জৈব উপাদান নষ্ট হয়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। ফসলের উৎপাদন কমে যায় বলে কৃষকরাও একসময় আবাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। টপ সয়েল রক্ষা করতে না পারলে আগামীতে কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। ফসলি জমি বা উদ্ভিদ বিনষ্ট হওয়ায় আশঙ্কা থাকলে সেখান থেকে মাটি কাটা যাবে না। কেউ তা অমান্য করলে তার জেল-জরিমানা করা যাবে বলে বিধান রয়েছে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে। কিন্তু এ আইন কঠোরভাবে খুব একটা প্রয়োগ হতে দেখা যায় না।

আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটানো হলে যে কোনো অপরাধের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। আইনকানুন তৈরি করা হয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বা বন্ধ করার জন্য। সমস্যা হচ্ছে দেশে অনেক ভালো ভালো আইন আছে। কিন্তু দেখা যায় যথাযথ প্রয়োগ নেই বা প্রয়োগে শৈথিল্য রয়েছে। যে কারণে অপরাধ দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বলতে চাই, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। এতে ফসলিজমি কমতে শুরু করেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমলে নিতে হবে। শুধু নওগাঁয় নয়, দেশের অন্যান্য জায়গায় ফসলিজমির মাটি কেটে বিক্রি করার মতো অপরাধ চলে। সেখানেও মাটি কাটা বন্ধে করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনাও আছে।